সুরা আন নাজম (পর্বঃ২২)

Spread the love

আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

আমরা সূরা আন-নাজম-এর ২৯ নম্বর আয়াত নিয়ে কথা বলছিলাম।

"আপনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন, যে আমাদের স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।"

ইংরেজিতে পড়লে আপনি হয়তো দু'বারই "turn away" (মুখ ফিরিয়ে নেওয়া) পড়বেন, কিন্তু এখানে দুই ধরনের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একটি বর্ণনা করছে নবী ﷺ-এর দৃঢ় অবস্থানকে। আর এর বিপরীতে, অন্যটি বর্ণনা করছে মুশরিকদের আরেক ধরনের একগুঁয়েমিকে—তারা কীভাবে একটা জিনিসকে আঁকড়ে ধরে আছে। আয়াতটি এরপর বর্ণনা করবে যে তারা ঠিক কী আঁকড়ে ধরে আছে, এবং সেই আলোচনা পরে আসবে। আমরা তা নিয়ে আরেকটু গভীরে কথা বলব।

কিন্তু এখন আমরা মনোযোগ দেব "مَن تَوَلَّىٰ عَن ذِكْرِنَا" (যে আমাদের স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে) এই অংশের ওপর। এর মানে কী? এর একটি অর্থ হতে পারে, যারা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের উপেক্ষা করুন। তারা তো অনেক কুরআন শুনেছে।

গত পাঁচ বছর ধরে তারা এটা শুনে আসছে। তারা জানে এটা কী। তারা জানে এর প্রভাব কেমন। তারা জানে এটা শুনলে তাদের ভেতরে কেমন অনুভূতি হয়, আর তারপরেও তারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়াকেই বেছে নিয়েছে। আপনাকে তাদের পেছনে দৌড়াতে হবে না। কুরআন নিজেই এর মূল্য প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

আপনাকে তাদের কাছে এর মূল্য প্রমাণ করতে হবে না। তাদের কাছে নত হতে হবে না। এটা একটা অর্থ। কিন্তু "আমাদের স্মরণ" (ذِكْرِنَا) আরেকটা বিষয়ের দিকেও ইঙ্গিত করে।

ذِكْرُ اللَّهِ فِي قَلْبِ كُلِّ مَنْ هُوَ عَلَى فِطْرَتِهِ الَّتِي فَطَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهَا
(আল্লাহর স্মরণ প্রত্যেক সেই ব্যক্তির অন্তরে রয়েছে, যাকে আল্লাহ তার ফিতরাতের ওপর সৃষ্টি করেছেন।)

"আমাদের স্মরণ"-এর আরেকটা অর্থ হতে পারে এই যে, মানবজাতিকে সৃষ্টিই করা হয়েছে তাদের ভেতরে আল্লাহর স্মরণ দিয়ে। আর এই লোকগুলো এমন একটা জিনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যা নিয়ে তাদের বিবেক এতদিন ধরে চিৎকার করে আসছিল। এমনকি যখন তারা মূর্তিপূজা করছিল, তখনও তাদের ভেতরের কিছু একটা বলছিল যে এটা ভুল। কারণ প্রত্যেক মানুষের ভেতরে জন্ম থেকেই আল্লাহর যিকির থাকে। প্রত্যেক মানুষের ভেতরে ফিতরাত থাকে।

কুরআন এমন একটি বিষয়কে সঠিকভাবে এবং এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করে, যা আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হরহামেশাই দেখি। আল্লাহ বলেন যে, খ্রিষ্টানরা যখন আল্লাহর কিতাব শোনে, তখন আপনি দেখবেন তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে এবং তারা বলে, কারণ তারা সত্যকে চিনতে পেরেছে। আর তারা বলে, "আমরা তো এর আগেও মুসলিম ছিলাম।"

إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ
(নিশ্চয় আমরা এর পূর্ব থেকেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) ছিলাম)। (সূরা আল-কাসাস, ২৮:৫৩)

আমি এমন শত শত, যদি হাজার হাজার নাও হয়, খ্রিষ্টানের সাথে দেখা করেছি, যারা মুসলিম হওয়ার পর বলেছে, "কিছু একটা ঠিকঠাক লাগছিল না। আর তারপর যখন আমি এটা (কুরআন) শুনলাম, মনে হলো, আরে! এই অনুভূতিটাই তো আমার ভেতরে সবসময় ছিল। এটাই তো আমার ভেতরে আগে থেকেই ছিল।"

إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ
(নিশ্চয় আমরা এর পূর্ব থেকেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) ছিলাম)। (সূরা আল-কাসাস, ২৮:৫৩)

সুতরাং আল্লাহর স্মরণের ধারণাটি শুধু এমন নয় যে খতীব সাহেব আপনাকে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দেবেন, বা ওহী আপনাকে আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দেবে। আসলে, আল্লাহর স্মরণ তো আগে থেকেই প্রত্যেক মানুষের ভেতরে রয়েছে। তারা শুধু এটাকে চেপে রাখে। তাই আল্লাহ বলছেন, এমন কাউকে উপেক্ষা করুন যে নিজের অন্তরকেই উপেক্ষা করছে, কারণ ওটা তো তার ভেতরেই আছে।

সে তার নিজের আসল সত্তাকেই উপেক্ষা করছে। তাই আপনার এটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। এটা এমন নয় যে তারা আপনাকে উপেক্ষা করছে। তারা কেবল সেই সত্যকে উপেক্ষা করছে যা তাদের গভীরে প্রোথিত আছে এবং তারা তা অনুভবও করতে পারে, কিন্তু তারপরেও তারা তা উপেক্ষা করছে।

এর আরেকটা অর্থ হতে পারে সেই ঐতিহাসিক যিকির—مِنْ عَهْدِ الْأَلَسْتُ  মানবজাতিকে এই পৃথিবীতে পাঠানোর আগে আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সামনে একত্রিত করেছিলেন—মানবতার সেই সর্বপ্রথম ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে একত্র করে প্রশ্ন করেছিলেন, "أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ?" (আমি কি তোমাদের রব নই?) আমি কি তোমাদের মালিক নই? আমি কি তোমাদের প্রতিপালক, তত্ত্বাবধায়ক, রক্ষাকর্তা নই? আমি কি তা নই? আর আমরা সবাই বলেছিলাম, "بَلَىٰ" (কেন নয়!), "شَهِدْنَا" (আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনিই)।

أَن تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَٰذَا غَافِلِينَ
(এটা এ জন্যে যে, তোমরা যেন কেয়ামতের দিন না বলতে পারো, ‘আমরা তো এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম’)। (সূরা আল-আ'রাফ, ৭:১৭২)

আমি এটা বলছি যাতে তোমরা কিয়ামতের দিন বলতে না পারো, "আমাদের তো এই ব্যাপারে কোনো ধারণাই ছিল না, আমরা তো গাফেল ছিলাম।" তোমরা অবগত ছিলে, তোমাদের সাথে এই কথোপকথন আগেই হয়ে গেছে। সুতরাং, "ذِكْرِنَا" (আমাদের স্মরণ) বলতে সেই কথোপকথনের স্মরণও হতে পারে, কারণ ওটাই ছিল ميثاق (মীছাক), সেই অঙ্গীকার যা আল্লাহ আমাদের থেকে নিয়েছিলেন তাঁকে আমাদের রব হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য। আর এখন যখন ওহী এসে তাদের সেই মূল অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, তারা শুধু এই স্মরণ করানো থেকে মুখ ফেরাচ্ছে না, তারা আসলে সেই প্রথম স্মরণ করানো থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

ব্যাপারটা মজার, তাই না? তারা الذِّكْرَى الْأُولَىٰ (প্রথম স্মরণ) এবং الذِّكْرَى الْآخِرَةِ (শেষ স্মরণ)—দুটো থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা সবচেয়ে পুরোনো স্মরণ থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, আবার একই সাথে সর্বশেষ স্মরণ থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
(সুতরাং, শেষ ও প্রথম (آخرة ও أولى), সবই তো আল্লাহর)। (সূরা আন-নাজম, ৫৩:২৫)

উফফ, এটা শুধু সুন্দর থেকে সুন্দরতর হতেই থাকে। কুরআনে কীভাবে বিষয়গুলো একটার সাথে আরেকটা জুড়ে যায়, কীভাবে? মাঝে মাঝে আপনাকে শুধু বসে ভাবতে হয়, আর বলতে হয়, "হ্যাঁ, এটা মানুষের কাজ নয়।"

এটা হলো عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَىٰ (তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী সত্তা)। এটা, এটা অন্য কিছু। যাইহোক, এবার আসুন…

আমরা গতকালের আলোচনায় দুটো জিনিস দেখেছিলাম। আমরা দেখেছিলাম অনুমান বা ধারণা (ظَنّ), আর দেখেছিলাম প্রবৃত্তিসুলভ কামনা-বাসনা (هَوَىٰ), যা তারা ভালোবাসে। আমি আপনাদের বলেছিলাম, ধারণা (ظَنّ) হলো একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যা আর কামনা (هَوَىٰ) হলো একটি মনস্তাত্ত্বিক, আবেগগত সমস্যা। মনে আছে? সহজ করে বললে, ظَنّ (ধারণা) হলো এখানকার সমস্যা (মাথার দিকে ইঙ্গিত করে), আর هَوَىٰ (কামনা) হলো এখানকার (বুকের দিকে ইঙ্গিত করে), ঠিক? তো, এই সমস্যা—চিন্তা-প্রক্রিয়ার সমস্যা এবং অন্তরের সমস্যা, ظَنّ বনাম هَوَىٰ।

যখন তিনি বলেন, "তারা আমাদের স্মরণ (ذِكْر) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,"—যিকির তো অন্তরে হয়। কারণ আল্লাহ বলেন, "إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ" (নিশ্চয় এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যার অন্তর আছে)। "أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ" (জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়)। যিকির বা আল্লাহর স্মরণ এখানে (মাথায়) নয়। আল্লাহর স্মরণ এখানে (বুকে)।

বেশ, তাহলে এখন এই আয়াতটি বলছে, "তারা আমাদের স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।" তাহলে আপনারা কি বুঝতে পারছেন এটা কী? আমরা কি বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যায় ফিরে যাচ্ছি নাকি আবেগগত সমস্যায়? আমরা আবেগগত সমস্যায় ফিরে যাচ্ছি। আর এর পরের শব্দটি দেখুন—

وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
(এবং সে পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি)।

এই ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি। তাদের কোনো উদ্দেশ্য, কোনো লক্ষ্য, কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না। إِرَادَة (ইরাদা) বলতে লক্ষ্য, আকাঙ্ক্ষা, পরিকল্পনা, জীবনে যা কিছু অর্জন করতে চান—সবই বোঝায়। আপনি নিজেকে পাঁচ বছর পর কোথায় দেখতে চান? দশ বছর পর কোথায় দেখতে চান? তাদের কাছে শুধু এটাই ছিল।

وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
(এবং সে পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি)।

এটা তাদের মনের বর্ণনা নাকি তাদের অন্তরের বর্ণনা? এটা তাদের অন্তরের বর্ণনা। এটা আসলে هَوَىٰ (কামনা) শব্দটিরই একটি ব্যাখ্যা। যেমনটি বলা হয়েছিল, "وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ" (এবং নফস যা কামনা করে)। "لَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا" (সে পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি)—এই দুটো বাক্য আসলে একই জিনিসের কথা বলছে, কিন্তু ভিন্ন শব্দ দিয়ে।

তো আল্লাহ আমাদের এমন একটি বিষয়ের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন যা তিনি আগেই বর্ণনা করেছেন। আর এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের বলেছেন যে, এই লোকগুলো আল্লাহর বাণীকে আঁকড়ে ধরে না, কারণ তারা অন্য কিছুকে আঁকড়ে ধরে আছে। আর সেই অন্য জিনিসটি হলো এই নিকৃষ্ট জীবনের কোনো কিছু।

আসুন, আমরা الْحَيَاةَ الدُّنْيَا শব্দটাকে শুধু 'পার্থিব জীবন' বলে অনুবাদ করি। কিন্তু এর ব্যাপারে আপনাদের কিছু জানা উচিত। الدُّنْيَا শব্দটি الْأَدْنَىٰ এর স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। যেমন আপনারা জানেন أَحْسَن (আহসান) ও حُسْنَىٰ (হুসনা), أَكْبَر (আকবার) ও كُبْرَىٰ (কুবরা), أَعْظَم (আ'যম) ও عُظْمَىٰ (উযমা), أَصْغَر (আসগর) ও صُغْرَىٰ (সুগরা), ঠিক সেভাবেই আছে أَدْنَىٰ (আদনা) ও دُنْيَا (দুনিয়া)। الْأَدْنَىٰ মানে হলো 'সবচেয়ে নিকৃষ্ট' এবং الدُّنْيَا মানেও হলো 'সবচেয়ে নিকৃষ্ট'। الْحَيَاةَ (জীবন) শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ, তাই এর সাথে স্ত্রীলিঙ্গ বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে, যার প্রকৃত অর্থ হলো 'সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীবন'।

এর আরেকটা অর্থ হলো 'সবচেয়ে কাছের জীবন', অর্থাৎ যে জীবনটা আপনি এখন খুব কাছ থেকে অনুভব করছেন, আর আরেকটা জীবন আছে যা আপনার থেকে একটু দূরে।

إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ بَعِيدًا
(তারা তো ওটাকে অনেক দূরে দেখে)। (সূরা আল-মা'আরিজ, ৭০:৬)

وَنَرَاهُ قَرِيبًا
(আর আমরা ওটাকে খুব কাছে দেখি)। (সূরা আল-মা'আরিজ, ৭০:৭)

তো الدُّنْيَا-র ধারণাটি হলো এমন এক জীবন, যেখানে আপনি যা কিছু চান তা খুব কাছে। আপনার প্রলোভনগুলো কাছে। আপনার ক্ষুধাগুলো কাছে। আপনার ক্যারিয়ার কাছে। যা কিছু আপনি আঁকড়ে ধরতে চান, সবই আপনার কাছে। আর আমরা সবকিছু তাড়াতাড়ি চাই এবং হাতের নাগালে চাই। আর যখন কোনো কিছু অনেক দূরে থাকে এবং তা পেতে অনেক সময় লাগবে, তখন আমাদের সেই ধৈর্য থাকে না। আল্লাহ বলেন, "আমি তোমাকে আখিরাত দেব," আর আমরা বলি, "কবে?" আল্লাহ বলেন, "তোমার সব আকাঙ্ক্ষা আমি পূরণ করব।" "হ্যাঁ, কিন্তু এই মুহূর্তে কী হবে? কারণ আমি তো এই মুহূর্তেই বাঁচতে চাই।" কারণ আপনি জানেন, الْحَيَاةَ الدُّنْيَا, এটা তো একদম কাছে। এই মুহূর্তের কী হবে? আল্লাহ আমার জন্য এই মুহূর্তে কী করবেন?

তিনি বলছেন, এই লোকগুলো আর কিছুই চায় না। তারা শুধু এই পার্থিব জীবনটাই চায়। একারণেই তারা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যখন তারা আপনার দ্বীনের দিকে তাকায়, এই মিশনের দিকে তাকায়, এই বার্তার দিকে তাকায়, এই কথাগুলোর দিকে তাকায়, তারা বলে—এটা আমার কোনো চাওয়ার সাথেই মেলে না। আমি ভালো অনুভব করতে চাই। এটা ভালো অনুভবের জন্য নয়। আমি ধনী হতে চাই। এটা ধনী হওয়ার জন্য নয়। আমি মানুষের কাছে নিজেকে জাহির করতে চাই। এটা জাহির করার জন্য নয়। আমি চাই, আমি চাই, আমি চাই, আমি চাই। আর কুরআন বলছে, তুমি যা চাও তা নয়, আল্লাহ যা চান তা হবে।

أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
(মানুষ কি তাই পায়, যা সে আকাঙ্ক্ষা করে?) (সূরা আন-নাজম, ৫৩:২৪)

فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
(না, শেষ ও প্রথম সবই তো আল্লাহর)। (সূরা আন-নাজম, ৫৩:২৫)

"না, ওটা আমি চাই না। আমি আমার জীবনটা বাঁচতে চাই।" আপনি এই কথাটা শুনেছেন না? "আমি শুধু নিজের মতো করে জীবনটা বাঁচতে চাই।" আল্লাহ বলছেন, "হ্যাঁ, এটাই তো তারা চায়। তারা শুধু এই জীবনটা বাঁচতে চায়।"

لَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
(সে শুধু এই পার্থিব জীবনই চেয়েছে)।

আল্লাহ তাদের কথা উদ্ধৃত করছেন। আর তারা আল্লাহর কথা উদ্ধৃত করছে। তারা জানেও না যে তারা কুরআনের একটি আয়াত পড়ছে যখন তারা বলে, "আরে ভাই, আমাকে আমার মতো বাঁচতে দাও।" ওহ, আপনি কুরআন জানেন? না না, কুরআনই আপনাকে চেনে।

وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
(এবং সে পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি)।

লক্ষ্য করুন, এখানকার সীমাবদ্ধতার কাঠামোটি—لَمْ এবং إِلَّا। لَمْ يُرِدْ إِلَّا… আপনি শুধু বলতে পারতেন, أَرَادَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا (তারা পার্থিব জীবন চেয়েছিল)। এর মানে হতো তারা পার্থিব জীবন চায়, কিন্তু সাথে অন্য কিছুও চায়। তাদের হয়তো কিছু আধ্যাত্মিক সাধনাও আছে, আরও কিছু জিনিস। ব্যাপারটা মজার।

আপনি হয়তো ভাবেন যে একদিকে আছে বস্তুবাদ আর অন্যদিকে আছে আধ্যাত্মিকতা, তাই না? দুটো ভিন্ন জিনিস, কারণ আধ্যাত্মিকতা তো অবস্তুগত। ঠিক? আপনার Chanel, Gucci, Mercedes, Ferrari—এগুলো বস্তুগত। আর আপনার যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন হলো আধ্যাত্মিক। ঠিক? কিন্তু আজকাল মজার ব্যাপার হলো, আধ্যাত্মিকতাকে কেবল এমনভাবে বিক্রি করা হচ্ছে যার বস্তুগত সুবিধা আছে। অর্থাৎ, আধ্যাত্মিকতাকে বস্তুবাদে পরিণত করা হচ্ছে। কেবল সেই ধরনের আধ্যাত্মিকতাই বিক্রি হয় যা বলে: "আপনি প্রশান্তি খুঁজে পাবেন, আপনি মনোযোগ দিতে পারবেন, এটা আপনার দুশ্চিন্তা দূর করবে, আপনি নিজেকে নিয়ে ভালো অনুভব করবেন, আর আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।" এর অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা আছে। "ওহ, আচ্ছা। দুনিয়া, দুনিয়া, দুনিয়া, দুনিয়া। হ্যাঁ, এই ধরনের আধ্যাত্মিকতা আমার পছন্দ। আমাকে একটা ইয়োগা ম্যাট দিন।" এটাই তো তাদের مُصَلَّى (ইবাদতের স্থান), তাই না?

وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
(এবং সে পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি)।

এখন এটা এমন একটা বিষয় নিয়ে যা আমি আপনাদের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে শিখিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, তিন ধরনের বক্তব্য আছে: নিরপেক্ষ (neutral), সন্দেহপূর্ণ (doubtful), এবং প্রতিপক্ষীয় (opponent)। নিরপেক্ষ বক্তব্য তখন ব্যবহার করা হয় যখন আপনার কথার কোনো বিরোধিতা নেই। এই আয়াতটি একটি নিরপেক্ষ বক্তব্য।

لَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا – এটা مَا أَرَادَ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا -এর মতো নয়। যদি مَا ব্যবহার করা হতো, তাহলে এটা হতো أَكَّد (তাকিদযুক্ত) বা আরও জোরালো না-বোধক। لَمْ হলো একটি সাধারণ না-বোধক। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। যেন আল্লাহ যা বলছেন তা একটি undisputed fact (অকাট্য সত্য)।

কিন্তু এখানে আমরা একটা সমস্যায় পড়ি। নবীজিকে ﷺ বলা হচ্ছে, "তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন," তাই না? কেন? কারণ তারা আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তো, তারা শারীরিকভাবে মুখ ফেরাচ্ছে আর নবীজিও ﷺ শারীরিকভাবে মুখ ফেরাচ্ছেন। ঠিক আছে। আপনি আংশিকভাবে দেখতে পাচ্ছেন যে তারা মুখ ফেরাচ্ছে। কিন্তু নবীজি ﷺ যা জানেন না তা হলো, তারা তাদের অন্তরে থাকা আল্লাহর যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। নবীজি ﷺ তাদের অন্তর দেখতে পারেন না। তাই আল্লাহ তাঁকে বলছেন যে তারা আসলে তাদের অন্তরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই আপনারও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। ঠিক আছে।

কিন্তু দ্বিতীয় অংশটি—"তারা দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছুই চায় না।" নবীজি ﷺ কি দেখতে পারেন কে দুনিয়ার জীবন চায় আর কে চায় না? না। একমাত্র যিনি তা দেখতে পারেন তিনি কে? একমাত্র আল্লাহ। "وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا" (এবং সে পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি)—এটা এমন একটা বিষয় যা কেবল আল্লাহই জানেন।

তো নবীজি ﷺ কিছু মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কারণ তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো "لَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا" (পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায় না) এমন নয়। তারা হয়তো ফিরে আসতে পারে। আর তাদের মধ্যে কিছু মানুষের অন্তরের অবস্থা আল্লাহ জানেন। আমি আপনাদের সামনে এই সমস্যাটি তুলে ধরতে চাই এবং আমরা আজকেই এর সমাধান করব।

সমস্যাটা কী? আল্লাহ এমন একটা বর্ণনা দিচ্ছেন যা আমি বা আপনি বিচার করতে পারি না। আমরা পারি না, যতক্ষণ না কেউ এসে বলে, "শুনুন, আমি শুধু এই দুনিয়ার জীবনই চাই। আর আমি সবসময় এটাই চেয়েছি, আর কিছু চাইনি।" যতক্ষণ না তারা আমার কাছে এটা স্বীকার করে এবং আমি ১০০% নিশ্চিত হই যে তারা সত্য বলছে, ততক্ষণ আমার জানার কোনো উপায় নেই যে এটাই তাদের অন্তরের অবস্থা। এটা তো কেবল আল্লাহই জানতে পারেন।

তাহলে নবীজিকে ﷺ এমন কারো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে কীভাবে বলা হচ্ছে যাকে তিনি বিচারই করতে পারেন না? তিনি তাদের বিচার করতে পারেন না কারণ এটা তাদের অন্তরের বিষয়। এটা অনেকটা এমন যে কাউকে বলা হলো, "মুনাফিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।" আর তারপর আপনি বললেন, "ওহ, আচ্ছা, তাহলে আমার আর আমার কাজিনের সাথে কথা বলা উচিত নয়।" আপনি তো জানেন না আপনার কাজিন মুনাফিক কি না। আপনি তো তার অন্তর পরীক্ষা করেননি। আপনার কাছে তো কোনো নিফাক স্ক্যানার নেই। যেমন কোভিড পরীক্ষার মেশিন আছে, মুনাফিকদের জন্য একটা নাক থেকে নমুনা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল।  "ওহ, দুঃখিত, আমাকে তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে।" এমন কোনো ব্যবস্থা তো নেই।

যেহেতু আমরা অন্তরের অবস্থা বিচার করতে পারি না, তাহলে আল্লাহ তাঁর নবীকে ﷺ আসলে কী বলছেন? আসলে, শুধু প্রথম অংশটা। তিনি নবীজিকে ﷺ বলছেন, "যারা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তাদের পেছনে ছুটবেন না। আর হ্যাঁ, তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা এই জীবন ছাড়া আর কিছুই চায় না, তাদের ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিন। তাদের অন্তর আমার হাতে, আমিই দেখব। ওটা আপনার সমস্যা নয়।"

এটা আমাদের আরও শেখায় যে, নবীজি ﷺ  তিনি কারো অন্তর পরিবর্তন করতে পারেন না। আপনি কি জানেন এটা আপনাকে আর আমাকে কী শেখায়? আর তিনি এই মানুষগুলোকে ভালোবাসতেন। এরা তো তাঁরই লোক। তাঁর নিজের মানুষ। এর মানে কী জানেন? আপনি কাউকে যত বেশিই ভালোবাসুন না কেন, আপনি তার অন্তর পরিবর্তন করতে পারেন না। "আমি তাকে এত ভালোবাসি! আমি চাই সে আরও ভালো হোক। কিন্তু সে তো বদলাচ্ছে না। আমার কী করা উচিত? আপনি কি আমাকে এমন কোনো আয়াত বলতে পারেন যা আমি তাকে বললে সবকিছু বদলে যাবে? আপনি কি বলতে পারেন আমি আমার মাকে কী বললে তার অন্তর পরিবর্তন করতে পারবো? আমি আমার ছেলেকে কী বলবো? আমার ভাইকে কী বলবো? আমার স্বামীকে কী বলবো? আমি তাকে কী বলবো?"

হায় আল্লাহ! নবীজিকে ﷺ আল্লাহ পুরো কুরআন দিয়েছিলেন, আর তিনি বলেননি, "ইয়া আল্লাহ, আমাকে আবু তালিবের জন্য একটা আয়াত দিন যা তার অন্তর বদলে দেবে। আমাকে আবু লাহাবের জন্য একটা সূরা দিন যা তাকে বদলে দেবে।" আল্লাহ তাঁকে একটি সূরা দিয়েছেন, কিন্তু অন্তর বদলানোর ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।

আমরা এমন একটা মানসিকতা তৈরি করে ফেলেছি যে, কোনোভাবে আমরাই আরেকজনের অন্তর পরিবর্তনের জন্য দায়ী। আমরা এর নিয়ন্ত্রণে নেই। ওটা আল্লাহর হাতে। আর ওটা সেই ব্যক্তির হাতেও, যে তার অন্তরকে একটা জিনিসে—কেবলমাত্র দুনিয়াবি জিনিসে—আবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

وَلَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
(এবং সে পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি)।

এরপর,

ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ
(এটাই হলো তাদের জ্ঞানের দৌড়)।

এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়। مَبْلَغ বা 'দৌড়' শব্দটি নিয়ে আমরা একটু কথা বলব। যখন আপনি কোনো জায়গায় পৌঁছান, তখন বলা হয় بَلَغْتُ الْمَكَانَ (আমি সেই জায়গায় পৌঁছেছি)। আর التَّبْلِيغَةُ হলো এমন একটা দড়ি যা বালতিকে কূপে পৌঁছানোর জন্য অন্য দড়ির সাথে বাঁধা হয়। মাঝে মাঝে দড়ি যথেষ্ট লম্বা হয় না। তখন তারা প্রথম দড়ির সাথে আরেকটা দড়ি বাঁধে যাতে সেটা শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সেই দ্বিতীয় দড়ি, যা আপনাকে তলায় পৌঁছাতে সাহায্য করল, সেই দড়িকে বলা হয় التَّبْلِيغَةُ।

نَبْتٌ بَالِغٌ—এই শব্দটি সবুজ গাছপালা, ফুল, উদ্ভিদের জন্য ব্যবহার করা হয়, যখন গাছপালা পরিপক্ক হয়। যখন আপনার গাছগুলো পুরোপুরি বেড়ে ওঠে, তখন তারা তাদের إِنْتِهَاءُ تَمَامِ نُمُوِّهِ (সম্পূর্ণ বৃদ্ধির শেষ সীমায়) পৌঁছে যায়। এর বৃদ্ধি শেষ। এটা পুরোপুরি পরিপক্ক। একইভাবে, একটি ছেলে যখন بالغ (বালিগ) হয় এবং বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়, তখন তাদের জন্যও بَلَغْتُ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কারণ গাছটিও পরিপক্ক হয়েছে, শিশুটিও পরিপক্ক হয়েছে। وُصُولُ شَيْءٍ إِلَى غَايَةٍ لَهُ—যখন কোনো কিছু তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়, তখন بُلُوغ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

মজার ব্যাপার হলো, একটি খারাপ শব্দও আছে—رَجُلٌ بُلْغَةٌ। এটা আরেকটি ইসলামি গালি যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন। بُلْغَةٌ। যদিও বলা কঠিন। بُلْغَةٌ। এটা হলো خَبِيث (খাবীছ), একজন নোংরা ব্যক্তি। الْمَقْصُودُ أَنَّهُ يَبْلُغُ مَا يُرِيدُ بِأَيِّ وَسِيلَةٍ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ مَقْبُولَةً—এটা এমন একজন ব্যক্তি যে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যেকোনো কিছু করতে পারে। সে কাকে পিষে মারছে, কাকে ধ্বংস করছে, কোন অন্যায় পথ ধরছে—তাতে তার কিছু যায় আসে না। তাকে যা পৌঁছাতে হবে, সে তা পৌঁছাবেই। তার লক্ষ্যই সব। আপনি জানেন না, 'the ends justify the means' (লক্ষ্যই উপায়কে ন্যায্য করে তোলে)? ওই ধরনের লোকদের بُلْغَةٌ বলা হয়। কারণ তারা শুধু লক্ষ্যের দিকেই মনোযোগী। আর কিছু তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। উপায়গুলো ন্যায্য।

আচ্ছা, তো 'পৌঁছানো' শব্দটির মধ্যে পরিপক্কতা, চূড়ান্ত গন্তব্য, কূপের তলা, কীভাবে কূপের তলায় পৌঁছাতে হয়, এবং একজন ভয়ঙ্কর মানুষ—সবই অন্তর্ভুক্ত। এখন, مَبْلَغُهُمْ শব্দটি একটি اسم ظرف مكان (স্থানের নাম)। এর মানে হলো, এটাই তাদের পৌঁছানোর শেষ সীমা।

এখন, প্রথম যে জিনিসটা আপনাকে বুঝতে হবে তা হলো ذَٰلِكَ। একারণেই আরবি এত গুরুত্বপূর্ণ। ذَٰلِكَ একটি পুংলিঙ্গ নির্দেশক শব্দ। ইংরেজিতে আমরা বলি 'that' (ওটা)। কিন্তু আপনি একজন পুরুষের জন্যেও 'that' বলতে পারেন, আবার একজন নারীর জন্যেও। আপনি বলতে পারেন 'that man', 'that woman'। কিন্তু আরবীতে আপনি ذَٰلِكَ الْمَرْأَةُ বলতে পারবেন না। আপনি একজন নারীর জন্য ذَٰلِكَ ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনাকে تِلْكَ ব্যবহার করতে হবে। تِلْكَ الْمَرْأَةُ। একজন পুরুষের জন্য আপনাকে ذَٰلِكَ الرَّجُلُ ব্যবহার করতে হবে। তো ذَٰلِكَ শব্দটি পুংলিঙ্গ। যদি আপনার কাছে অনুবাদ থাকে, তাহলে এর ওপর একটা 'পুং' লিখে রাখুন, কারণ ذَٰلِكَ পুংলিঙ্গ।

সমস্যা হলো, আগের আয়াতে বলা হয়েছে الْحَيَاةَ الدُّنْيَا। الْحَيَاةَ الدُّنْيَا শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ। ঠিক? 'পার্থিব জীবন' আসলে স্ত্রীলিঙ্গ। তো যদি এটা পার্থিব জীবনকে বোঝাতো, তাহলে ভাষাটা হতো تِلْكَ مَبْلَغُهُمْ (ওই পার্থিব জীবনই তাদের জ্ঞানের দৌড়)। কিন্তু আসলে এই শব্দটি ফিরে যাচ্ছে لَمْ يُرِدْ (সে চায়নি) এর দিকে। কারণ لَمْ يُرِدْ থেকে আসে الْمُرَاد (যা চাওয়া হয়েছে), আর الْمُرَاد শব্দটি পুংলিঙ্গ। যা তারা চায়। তাদের 'চাওয়া'টাই পুংলিঙ্গ।

সুতরাং, এটা যা নির্দেশ করছে তা হলো, তাদের চাওয়াই হলো তাদের জ্ঞানের দৌড়।

আমাকে এটা আবার ব্যাখ্যা করতে দিন। বা আবার বলতে দিন। আমি চাই এই আয়াতটি আপনার মাথায় গেঁথে যাক। এখন, তাদের চিন্তা-প্রক্রিয়ার একটি সীমা আছে। একটি ছাদ আছে। আর সেই ছাদটি নির্ধারিত হয়েছে শুধুমাত্র এই দুনিয়াকে পাওয়ার ইচ্ছার দ্বারা। একারণেই তারা এর বাইরে আর কিছু চিন্তা করতে পারে না। তিনি আবেগগত এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়ের মধ্যে সংযোগটি আবার ফিরিয়ে আনছেন। আমরা রোবট নই। আমরা পুরোপুরি গণনাভিত্তিক প্রাণী নই। আমাদের এজেন্ডা, আমাদের চিন্তা, আমাদের আবেগ আমাদের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করে। এখানেই মনোবিজ্ঞানের জগৎ প্রবেশ করে। যদি আমরা পুরোপুরি যুক্তিবাদী, যৌক্তিক প্রাণী হতাম, তাহলে মনোবিজ্ঞান নামক কোনো শাস্ত্রই থাকতো না। এর অস্তিত্বই থাকতো না। আমাদের কোনো আবেগ থাকতো না। এর কোনো অস্তিত্ব থাকতো না। আমরা শুধু… যা সত্য তা করতাম। যা নয়, তা করতাম না।