সুরা আন নাজম (পর্বঃ০৯)

Spread the love

কুরআনের একজন শিক্ষার্থী এমন কিছু শিখছে যা شَدِيدُ الْقُوَىٰ (প্রচণ্ড শক্তিশালী সত্তা), মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে শিখিয়েছিলেন। তাঁকে قوي (শক্তিশালী) বানিয়েছেন, তাঁকে মজবুত করেছেন। আর তারপর তিনি (ﷺ) সেটা সাহাবাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদেরকে শক্তিশালী করেছেন। আর তাঁরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা পৌঁছে দিয়েছেন। আর আজ, আপনি আর আমি কুরআন শিখছি, যা আমাদেরকে কী বানাচ্ছে? শক্তিশালী।

এখন… এখন আমরা আসল মজার অংশে আসি। গতকাল শ্রোতাদের মধ্যে থেকে একজন যুবক আমার কাছে এসে বললো, "আল্লাহ জিবরীল (আঃ) সম্পর্কে এমনটা কেন বলছেন? আল্লাহ তো এখানে তাঁর নাম উল্লেখ করেননি। আল্লাহ তো এখানে জিবরীলের নাম বলেননি।"

তো, আমি প্রথমে আপনাদের জন্য এর অনুবাদটা করে দিই। عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَىٰ (তাঁকে শিখিয়েছেন প্রচণ্ড শক্তিশালী একজন)। যিনি প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী, তিনিই তাঁকে শিখিয়েছেন। এই প্রচণ্ড শক্তিশালী সত্তা কে? তিনি হলেন জিবরীল (আঃ)। শিখিয়েছেন কাকে? শিখিয়েছেন নবী (ﷺ) কে।

কিন্তু এখানে যে 'হু' (هُ) ব্যবহার করা হয়েছে, এর অর্থ হতে পারে 'তাঁকে' (নবীকে) শিখিয়েছেন, আবার এর অর্থ হতে পারে 'সেটা' (কুরআন) শিখিয়েছেন। তাই, এই শক্তিশালী সত্তা নবী (ﷺ) কেও শিখিয়েছেন এবং এই শক্তিশালী সত্তা কুরআনকেও শিখিয়েছেন—দুটো অর্থই এখানে সত্য। দুটো অর্থই এখানে উহ্য রাখা হয়েছে, যা বিষয়টাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। কারণ এর আগের আয়াতগুলোতে নবী (ﷺ) এবং কুরআন—দু'জনের কথাই বলা হচ্ছিল। যখন আল্লাহ বললেন مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ (তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয়নি), তখন সেটা ছিল নবী (ﷺ) সম্পর্কে। যখন বলা হলো وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ (আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না), সেটাও নবী (ﷺ) সম্পর্কে। আবার যখন বলা হলো إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ (এ তো কেবল ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়), সেটা ছিল কুরআন সম্পর্কে। আর عَلَّمَهُ -এর 'হু' তে এসে নবী (ﷺ) এবং কুরআন উভয়কেই একসাথে মিলিয়ে দেওয়া হলো। অর্থাৎ, জিবরীল (আঃ) 'সেটা' (কুরআন) শিখিয়েছেন এবং জিবরীল (আঃ) 'তাঁকে' (নবী ﷺ) শিখিয়েছেন।

কিন্তু যুবকটির প্রশ্নটা কিন্তু আসলেই চমৎকার ছিল। "কেন আল্লাহ বলছেন, 'প্রচণ্ড শক্তিশালী একজন তাঁকে শিখিয়েছেন'? মানে, যিনি প্রচণ্ড রকমের শক্তিশালী, তিনি শিখিয়েছেন—এই কথাটা বলার কারণটা কী?" আমরা এই বিষয়টা একটু একটু করে বোঝার চেষ্টা করবো।

প্রথমত, قُوًى (কুওয়া) হচ্ছে قُوَّة (কুওয়াহ) এর বহুবচন। قُوَّة মানে শক্তি বা ক্ষমতা, আর قُوًى মানে বিভিন্ন রকমের শক্তি বা ক্ষমতা। আল্লাহ বলছেন যে এই বার্তাবাহক, জিবরীল (আঃ), তাঁর শুধু এক ধরণের শক্তি নেই। তাঁর রয়েছে বিভিন্ন ধরণের শক্তি, আর সেই প্রতিটি শক্তিই অত্যন্ত প্রচণ্ড। شَدِيد (শাদীদ) শব্দটি তীব্রতা বা প্রচণ্ডতা বোঝায় আর قُوًى হলো বহুমাত্রিক শক্তি। তাঁর ভ্রমণের ক্ষমতা অন্য কারো মতো নয়, তাঁর বোঝার ক্ষমতা অন্য কারো মতো নয়, তাঁর ধ্বংস করার ক্ষমতা অন্য কারো মতো নয়, তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা—এর প্রতিটিই এক একটি শক্তি। আপনারা বুঝতে পারছেন? তাঁর শক্তির বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। হয়তো তাঁর ৬০০ ডানার বর্ণনার মধ্যে এই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। প্রতিটি ডানা হয়তো একেকটি ভিন্ন শক্তির প্রতীক। কারণ তিনি তো এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি ডানা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে দেখিয়েছিলেন। তাই এর মধ্যে আরও অনেক গভীর মাত্রা রয়েছে।

এরপর, شَدِيد (শাদীদ) শব্দটির মধ্যে এক ধরণের হুমকিও আছে। যখন বলা হয়, "যিনি প্রচণ্ড শক্তিশালী," এর মধ্যে একটা হুমকিও থাকে। ব্যাপারটা এমন যে, "শোনো, আমার শিক্ষক কিন্তু অনেক শক্তিশালী। আর তুমি যখন আমার আর আমার এই শেখার প্রক্রিয়াটা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করছো, তুমি আসলে আমার শিক্ষককে নিয়েও মজা করছো, যিনি খুবই শক্তিশালী। তুমি তাঁর সাথে লাগতে যেও না।" সুতরাং شَدِيدُ الْقُوَىٰ (প্রচণ্ড শক্তিশালী সত্তা) কথাটি এক ধরণের পরোক্ষ হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য, যারা এই ওহী নিয়ে ঠাট্টা করছিল। আপনারা বুঝতে পারছেন? এটাও এর একটা অর্থ।

কিন্তু এরপর বিষয়টা আরও সুন্দর হয়ে যায়। যখন আমি বলি, "আমি একজন জিনিয়াস শিক্ষকের কাছে শিখেছি," জানেন এর মানে কী? এর মানে হলো, আমি তাঁর জিনিয়াস হওয়ার কিছু গুণাবলী থেকে উপকৃত হচ্ছি। যখন আমি বলি, "আমি একজন অত্যন্ত সৃজনশীল শিল্পীর কাছে শিখেছি," তার মানে আমি তাঁর কী থেকে উপকৃত হচ্ছি? তাঁর সৃজনশীলতা থেকে। এটা আমাকে আরও সৃজনশীল করে তুলছে, তাই না? তাহলে যখন আমি একজন শক্তিশালী শিক্ষকের কাছে শিখছি, তখন আমি তাঁর কাছ থেকে কী পাচ্ছি? শক্তি। ঠিক।

যেন আল্লাহ বলছেন, "তোমাদের চোখে এই রাসূলের কোনো রাজনৈতিক প্রভাব নেই, তাঁর কোনো সমর্থন নেই, তাঁর কোনো অর্থনৈতিক ভিত্তি নেই। তোমরা কুরাইশের লাখপতিরা অনেক শক্তিশালী, আর তিনি দুর্বল অবস্থায় আছেন। যারা তাঁকে অনুসরণ করে, তারা হয় দেউলিয়া, নয়তো দাস, নয়তো অত্যাচারিত। তাই তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি দুর্বল। কিন্তু তাঁকে যিনি শেখাচ্ছেন তিনি আল্লাহর সবচেয়ে শক্তিশালী সৃষ্টি। এবং তিনি তাঁকেও চূড়ান্ত শক্তিশালী বানাচ্ছেন। তোমরা এটা দেখতে পাচ্ছো না, তার মানে এই নয় যে এটা সত্যি নয়।"

এটা আসলে এক দারুণ শক্তিশালী বার্তা। কুরআনের একজন শিক্ষার্থী এমন কিছু শিখছে যা شَدِيدُ الْقُوَىٰ (প্রচণ্ড শক্তিশালী সত্তা) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে শিখিয়েছিলেন, তাঁকে قوي (শক্তিশালী) বানিয়েছিলেন। তারপর তিনি সেটা সাহাবাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদেরকে শক্তিশালী করেছেন। আর তাঁরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা পৌঁছে দিয়েছেন। আর আজ, আপনি আর আমি কুরআন শিখছি, যা আমাদেরকে কী বানাচ্ছে? শক্তিশালী। এটা আমাদের শক্তি দেয়। কারণ এর শিক্ষককে শুধু জ্ঞানী বা বিশ্বাসী হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি, বরং বলা হয়েছে তিনি অবিশ্বাস্য রকমের শক্তিশালী। এটা আমাকে কুরআন শেখার জন্য ক্ষমতাবান করে তোলে। এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কুরআন শেখার জন্য ক্ষমতাবান করেছিল।

সুতরাং এই দ্বীন দুর্বল অবস্থানে দাঁড়িয়ে নেই, যদিও দেখে মনে হতে পারে মুসলিমরা পদদলিত, তারা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে, বা উহুদের যুদ্ধে অনেক সাহাবী শহীদ হয়েছেন, বা সাহাবাদের কয়লার আগুনে পোড়ানো হচ্ছে, পায়ে মাড়ানো হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে—এগুলো সব দেখে দুর্বলতা, দুর্বলতা আর দুর্বলতাই মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে, পৃথিবীতে তাদের চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই। কেউই তাদের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে, কারণ তাদের কাছে এমন কিছু আছে যা আর কারো কাছে নেই। তাদের কাছে ঈমান আছে। তাদের ভেতরে কুরআন আছে।

আর তাছাড়া, ভাবুন তো, যদি সবচেয়ে শক্তিশালী সত্তার প্রয়োজন হয় এটা শেখানোর জন্য… যেমন ধরুন, কেউ যদি কাউকে অলিম্পিকের ভারোত্তোলন শেখায়, তাহলে তাকে শেখানোর জন্য নিজেকেও তো প্রচণ্ড শক্তিশালী হতে হবে, তাই না? সুতরাং যে জিনিসটা শেখানোর জন্য প্রচণ্ড শক্তির প্রয়োজন, সেই জিনিসটা নিজেও নিশ্চয়ই প্রচণ্ড শক্তিশালী হতে হবে। জিবরীল (আঃ) কে প্রয়োজন হয়েছিল কুরআন শেখানোর জন্য, কারণ কুরআন এতটাই শক্তিশালী। কুরআন দুর্বল নয়। কুরআন কোনো আক্রমণের সামনে নতি স্বীকার করে না। কুরআন সমালোচনা, খেয়ালখুশি আর উপহাসের সামনে ভেঙে পড়ে না। কারণ এটা এতটাই শক্তিশালী যে, একে সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা ছাড়া আর কারো পক্ষে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব ছিল না, যাঁকে তাঁর সমস্ত শক্তি ব্যবহার করতে হয়েছিল এই কুরআন পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

আমরা এখানে কুরআনের শক্তি সম্পর্কে জানছি। আর এই কুরআনকে নবী (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছে দিতে কী পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়েছিল, সেটাও জানছি। আমরা সাধারণত এই আয়াতটা ছাড়া ছাড়া ভাবে পড়ে যাই, "ওহ, জিবরীল (আঃ) কুরআন দিয়েছেন।" আরে ভাই, না। এর পেছনে আরও অনেক কিছু ঘটছে। এটা আল্লাহর ফেরেশতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জন, যাঁকে সবচেয়ে ভারী দায়িত্বটি দেওয়া হয়েছিল। আর আল্লাহ নিজে কুরআনকে কীভাবে বর্ণনা করেছেন? قَوْلًا ثَقِيلًا (ভারী বাণী)। "আমি তোমাকে এক 'ভারী বাণী' দিতে চলেছি।" আর তিনি বলেন, "যদি তুমি এই কুরআনকে কোনো পাহাড়ের ওপর অবতীর্ণ হতে দেখতে, তুমি তাকে আল্লাহর ভয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যেতে দেখতে।" ভাবুন একবার! এই ওহী এখন অবতীর্ণ হচ্ছে। কুরআনের শক্তিকে বর্ণনা করা হচ্ছে সেই শিক্ষকের মাধ্যমে, যিনি এটা পৌঁছে দেওয়ার সময় তাঁর চূড়ান্ত শক্তি ব্যবহার করেছিলেন।

এরপর এখানে বর্ণনার ধারা বা চেইন-এর একটা ধারণা আছে। যেকোনো মুসলিম, যিনি হাদীসের ধারণার সাথে পরিচিত, তিনি জানেন যে বর্ণনার চেইন বা সনদ শক্তিশালী হতে হয়, তাই না? এখন, বিষয়টা অবিশ্বাস্য। আপনাকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের মধ্যে একটি চেইন বা সংযোগ স্থাপন করতে হবে। আর সেই সংযোগটি স্থাপিত হচ্ছে: আল্লাহ, তারপর এই শক্তিশালী ফেরেশতা, এবং তারপর নবী (ﷺ)। আর তাঁরা সবাই এখন সংযুক্ত। কে তাঁকে শেখাচ্ছেন? আল্লাহর ফেরেশতা। এটা এই আয়াতের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয়গুলোর একটি, যা আমার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

شَدِيد (শাদীদ), আরবী ভাষায়… এর ক্রিয়ামূল ব্যবহৃত হতো দড়ির গিঁট বা রশি শক্ত করে বাঁধার জন্য। قُوًى (কুওয়া), এর একটি মূল অর্থ হলো শক্তিশালী দড়ি বা রশি। আর এর পরের শব্দটি হলো ذُو مِرَّةٍ (যু মিররাতিন), আর مِرَّة (মিররাহ) হলো দড়ির একটি প্রাচীন আরবী শব্দ।

তাহলে شَدِيد (শাদীদ)-এর সাথে দড়ির সম্পর্ক, قُوًى (কুওয়া)-এর সাথে দড়ির সম্পর্ক, আর مِرَّة (মিররাহ), যা আমি এখনও ব্যাখ্যা করিনি, সেটার সাথেও কিসের সম্পর্ক? দড়ির। কুরআনকে কী বলা হয়েছে? حَبْلِ اللَّهِ (আল্লাহর রশি)। "আল্লাহর রশিকে শক্ত করে ধরো।"

যেন প্রচণ্ড শক্তিশালী একজন, সবচেয়ে মজবুত রশিটা দিয়ে নবী (ﷺ) কে তা পৌঁছে দিচ্ছেন। এই চিত্রটা এত সুন্দর আর শক্তিশালী! যখন আপনি কুরআন আঁকড়ে ধরেন, আপনি আসলে একটি শক্তিশালী রশিই ধরেন। এখন আমি আপনাদের অনুপ্রাণিত করতে চাই। আমি আপনাদের একটু খারাপ লাগাতে চাই, যাতে আপনারা অনুপ্রাণিত হন। আমি জানি লজ্জা দেওয়া ভালো কোনো অনুপ্রেরণার উপায় নয়… আমি এটা জানি কারণ পাকিস্তানে আমরা মানুষকে লজ্জা দিয়েই অনুপ্রাণিত করি। কাউকে ঘুম থেকে জাগানো বা জীবনে কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে আমরা এটাই করি, তাই না? কিন্তু আমি বলতে চাই…

আরবী ভাষা শেখা এবং এর সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বোঝা আপনার জন্য কুরআনের এত দরজা খুলে দেবে! যেমন আজকের এই কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তার মাধ্যমটাই হলো ভাষা। এখন, আপনাদের অনেকেই আরবী জানেন না। ঠিক আছে। আমার কাজ হলো আপনাদের এই ব্যাপারে একটু খারাপ অনুভব করানো। কিন্তু সাথে এটাও বলা যে, এটা শেখা সহজ। আমি সত্যি বলছি, এটা সহজ। আপনি বলবেন, "না, এটা সহজ না। এখানে অনেক তথ্য।" হ্যাঁ, অনেক তথ্য। প্রোগ্রামিংয়েও তো অনেক তথ্য ছিল, আর এখন আপনি বোকার মতো অ্যাপের জন্য কোড লিখছেন। ট্যাক্সের নিয়মকানুনও তো অনেক কঠিন, কিন্তু আপনি তো একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ওইগুলো তো আরও অনেক বেশি কঠিন। ক্যালকুলাসও তো কঠিন, কিন্তু আপনি ক্লাসে সেটা করছেন আর কোনো অভিযোগ করছেন না। হাই স্কুলের বায়োলজিতেও অনেক তথ্য ছিল। স্যাট পরীক্ষাতেও তো অনেক তথ্য। তো কী হয়েছে? আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন? আপনি তো কত জটিল জিনিস শেখার ক্ষমতা রাখেন।

কিন্তু যখন এইটার কথা আসে, তখন বলেন, "জানি না…" আমি বাচ্চাদের কিছু ভিডিও গেম খেলতে দেখেছি… কী পরিমাণ মেন্যু, সাব-মেন্যু, আইটেম, আপগ্রেড, গোপন জায়গা আর আনলক করার চাবি যে তারা মুখস্থ জানে! "ওহ, এটা তো সহজ। তোমাকে শুধু X, X, স্কয়ার, R1, L1 চাপতে হবে আর দোয়া করতে হবে।" এভাবেই বটটাকে মারতে হয়। আপনি ভাবেন, "কীভাবে জানলি রে ভাই?" সে এটা মুখস্থ করে ফেলেছে।

আমরা শিখতে সক্ষম। আমরা শুধু নিজেদের বলি যে আমরা পারবো না। আর শয়তান আপনাকে 'ফাইনাল ফ্যান্টাসি ৮৭' শেখা থেকে আটকায় না। সে আপনাকে সব চরিত্র আর… অ্যানিমে সম্পর্কে আপনি যা জানেন তা ভয়ংকর। এই নামগুলো মনে রাখেন কীভাবে? আমার কাছে তো সব একই রকম লাগে। আপনি সবগুলো মনে রাখেন। আপনি সিনেমার সব রেফারেন্স মনে রাখেন। আপনারা গানের হাফেজ হয়ে গেছেন। কিন্তু কুরআনের বেলায়, "জানি না, এটা অনেক কষ্টের কাজ। মাশাআল্লাহ, আপনি নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট করেছেন।" না! যেকোনো মানুষ যা কিছুই ভালোবাসার সাথে করে, তা শিখতে পারে। মানুষের মস্তিষ্ক অবিশ্বাস্য। আর এর উপরে, যখন আপনি আল্লাহর জন্য এই ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন, আপনি একটি রশি আঁকড়ে ধরছেন। তখন গায়েবী সাহায্য ওয়াই-ফাই এর মতো আপনার হৃদয়ে, আপনার আত্মায়, আপনার মস্তিষ্কে আসতে শুরু করে। আর এটা এমনভাবে খুলে যায় যা আপনি কল্পনাও করতে পারেননি। আপনি কীভাবে বলেন এটা কঠিন? আপনার এই অজুহাত দেওয়ার সাহস হয় কী করে? এটা কোনো অজুহাত নয়, সাবধান।

আর যে-ই কুরআনকে আঁকড়ে ধরবে, সে কী হয়ে উঠবে? শক্তিশালী। আপনার মন শক্তিশালী হবে। আপনার স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী হবে। আপনার সক্ষমতা শক্তিশালী হবে। আপনার আত্মবিশ্বাস—সবকিছু শক্তিশালী হবে। শুধু কুরআনকে আঁকড়ে ধরুন। শুরু করুন।

আমি আপনাদের এই শেষ কথাটা বলি। মনে আছে আমি বলেছিলাম তিন ধরণের শ্রোতা ছিল? আপনাদের কি মনে আছে তারা কারা ছিল? নিরপেক্ষ, অনিশ্চিত বা বিরোধী। এখন পর্যন্ত, আয়াত নম্বর চার পর্যন্ত, ভাষাটা ছিল নিরপেক্ষ। কিন্তু আমরা জানি যে আলোচনাটা বিরোধীদের সাথেই হচ্ছে, তাই না? তাহলে প্রশ্ন হলো, আপনি কেন একজন বিরোধীর সাথে নিরপেক্ষ ভঙ্গিতে কথা বলবেন?

আমার এক বন্ধু একবার ভ্রমণের সময় বলেছিল, "তোমাকে এই শো-টা দেখতেই হবে।" আমার তখন করার মতো কিছু ছিল না। ঠিক আছে, একটা পর্ব দেখবো। সে আমাকে 'ওয়ান পাঞ্চ ম্যান'-এর একটা পর্ব দেখাল। আপনাদের কেউ কেউ হয়তো এটা চেনেন। আমি একটা পর্বই দেখেছিলাম। আমার আর কিছু দেখার প্রয়োজন হয়নি। আমি বললাম, "সব পর্ব কি এমনই?" সে বলল, "একদম এমন।" আমি বললাম, "তাহলে তুমি এটা দেখছো কেন?"

বিশাল এক দৈত্য লোকটাকে মারতে আসছে, আর সে একদম শান্ত… "হুম, আমি দেখছি তুমি শক্তিশালী। আমি দেখছি তুমি তোমার চূড়ান্ত চালটা দিতে যাচ্ছো।" সে একদম অবিচল আর শান্ত। সে কেন এত অবিচল আর শান্ত? কারণ সে জানে এই লোকটা তার শক্তির কাছে কিছুই না। দেখে অন্যরকম মনে হতে পারে, কিন্তু আমার ওর ভয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। ওর কথার জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন নেই।

আল্লাহ যখন কুরআনের উৎসের কথায় এলেন… তখন জিবরীল (আঃ)-এর শক্তি বা কুরআনের ক্ষমতা প্রমাণ করার জন্য কোনো জোর দিয়ে কথা বলার প্রয়োজনই ছিল না। সাধারণ কথা। যেন বলা হচ্ছে, "এর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনো ক্ষমতাই নেই। তোমরা এর সামনে শক্তিহীন।" এটা অবিশ্বাস্য। কখনও কখনও ভাষার জোর বক্তব্যকে অসাধারণ করে তোলে। আবার কখনও কখনও জোর তুলে নেওয়াটা বক্তব্যকে অসাধারণ করে তোলে।