সবাইকে আবারও স্বাগতম। আমরা দ্বিতীয় অংশে যাওয়ার আগে আমি প্রথমে যা করতে চাই, তা হলো আয়াত ১ থেকে ১৮ পর্যন্ত এর গঠন এবং বিন্যাসের একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরা। আর আমি এটা আপনাদেরকে এই প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেখাতে চাই।
তো, আমরা প্রথমে যা পড়েছিলাম তা হলো, আল্লাহ তারকার কসম করেছেন, অর্থাৎ النجم (আন-নাজম)। আর তিনি বলেছেন যে, রাসূল ﷺ পথ হারাননি— مَا ضَلَّ سَحِبُكُمْ وَمَا غَوَى (তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্টও হয়নি, বিপথগামীও হয়নি)। আর إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌّ يُحَى (এটা তো কেবল ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়)—এটা একটা শক্তিশালী ওহী যা তাঁকে দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয় ছিল—যিনি তাঁকে শিখিয়েছেন তিনি হলেন প্রবল শক্তিধর—
(যিনি প্রবল শক্তিধর, প্রজ্ঞার অধিকারী)। আর তিনি তাঁর নিকটবর্তী হয়েছিলেন, তাই না? ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى (অতঃপর সে নিকটবর্তী হলো এবং ঝুঁকে পড়ল, ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা করলেন)। এরপর আপনারা দেখছেন, مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى (তিনি যা দেখেছেন, তাঁর অন্তঃকরণ তা মিথ্যা বলেনি)। আর তোমরা কি তাঁকে নিয়ে সন্দেহ করছ?
أَفَتُ مَأْرُونَهُ عَلَى مَا يَرَى (তিনি যা দেখেছেন, সে বিষয়ে কি তোমরা তাঁর সাথে বিতর্ক করবে?)। তিনি যা দেখেছেন, তা নিয়ে কি তোমরা কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছ?
এরপর আমরা দ্বিতীয় দর্শনটি দেখেছিলাম, মনে আছে?
আর অবশ্যই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন, প্রান্তবর্তী সিদরা গাছের কাছে, যার কাছেই অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। যখন গাছটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার তা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল)। তারপর শেষে আমরা দেখি, مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى (তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং সীমা লঙ্ঘনও করেনি)। চোখ পথচ্যুত হয়নি, ভুল করেনি। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়নি। আর তিনি আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন দেখেছেন।
তো, এগুলোই ছিল সেই বিষয়বস্তু যা আমরা এখন পর্যন্ত আয়াত নম্বর ১ থেকে ১৮ পর্যন্ত আলোচনা করেছি।
আমি আপনাদের কিছু একটা দেখাতে চাই। শুরুটা হয়েছে এই দুটো জিনিস দিয়ে— مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى (তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্টও হয়নি, বিপথগামীও হয়নি)। তিনি পথ হারাননি, তিনি পথচ্যুত হননি। দুটো নেতিবাচক জিনিসকে নাকচ করা হয়েছে। দুটো নেতিবাচক বিষয়কে অস্বীকার করা হয়েছে। আর আপনি যদি একদম শেষে তাকান— مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى (তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং সীমা লঙ্ঘনও করেনি)। চোখ পথচ্যুত হয়নি এবং চোখ সীমা লঙ্ঘনও করেনি। আপনারা কি দেখছেন এই দুটো জিনিসের পরিপূর্ণতা কীভাবে একে অপরের সাথে মিলে যাচ্ছে, উপরের অংশ আর নিচের অংশ? ( সহজে বোঝার জন্য নিচের টেবিল দেখুন)
আর উপরের অংশে তিনি বলেছেন, তিনি তাঁকে দিয়েছেন— وَإِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌّ يُحَى (এটা তো কেবল ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়)। তিনি তাঁকে এক শক্তিশালী ওহী দিয়েছেন। তানভীন এখানে আযমাহ বা মাহাত্ম্য প্রকাশ করছে। আর শেষে তিনি বলেছেন, তিনি তাঁকে দেখিয়েছেন বা তিনি দেখেছেন আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তো আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, শুরুর প্রথম চারটি আয়াতের সাথে শেষের দুটি আয়াতের একটি গভীর সংযোগ রয়েছে। তারা একে অপরের পরিপূরক।( সহজে বোঝার জন্য নিচের টেবিল দেখুন)
এবার আপনারা খেয়াল করুন, মাঝখানের অংশটির রঙও একই রকম, তাই না? আমি এটাকে একই রঙে রাঙিয়েছি। এটা হলো— مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى أَفَتُ مَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى (তিনি যা দেখেছেন, তাঁর অন্তঃকরণ তা মিথ্যা বলেনি। তিনি যা দেখেছেন সে বিষয়ে কি তোমরা তাঁর সাথে বিতর্ক করবে?)।
তো এখন যদি আপনি প্রথম অংশ, তৃতীয় অংশ আর পঞ্চম অংশকে একসাথে নেন, তাহলে দেখবেন সবগুলো নাকচকারী বক্তব্য একসাথে চলে আসছে। সেগুলো কী? مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى (তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্টও হয়নি, বিপথগামীও হয়নি)—প্রথম অংশ। مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى (তিনি যা দেখেছেন, তাঁর অন্তঃকরণ তা মিথ্যা বলেনি)—মাঝের অংশ। مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى (তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং সীমা লঙ্ঘনও করেনি)—শেষ অংশ। এক, তিন এবং পাঁচ। ( সহজে বোঝার জন্য নিচের টেবিল দেখুন)
তাহলে এর যে অংশগুলো এখন বাকি রইল, তা হলো দুই আর চার। যখন আপনি দ্বিতীয় অংশের দিকে তাকাবেন, আপনি দেখবেন তিনি সেই শক্তিশালী ফেরেশতার সাথে সাক্ষাৎ করছেন এবং এটি ছিল প্রথম সাক্ষাৎ। আর যখন আপনি চতুর্থ অংশের দিকে তাকাবেন, দেখবেন সেটি হলো দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। ( সহজে বোঝার জন্য নিচের টেবিল দেখুন)
তাহলে আমি যা বলছি তা হলো, এই ১৮টি আয়াতে আসলে এক অসাধারণ সুন্দর স্থাপত্যশৈলী রয়েছে। ঠিক আছে? যদি আপনি এটাকে এভাবে চিহ্নিত করেন— ধরুন, A, B, C, D, এবং E। তাহলে ব্যাপারটা এমন যে, A, C এবং E একে অপরের সাথে সংযুক্ত, আর B এবং D একে অপরের সাথে সংযুক্ত। আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন?
A | পথভ্রষ্ট বা খামখেয়ালিপনায় চালিত নন। এটি এক শক্তিশালী ওহী (আয়াতঃ ১-৪) |
B | মহাশক্তিধর পৃথিবীতে নেমে এসে নিকটবর্তী হলেন (৫-১০) |
C | অন্তর মিথ্যা বলেনি। তোমরা কি তাঁকে সন্দেহ করছ? (১১-১২) |
D | তিনি তাঁকে আসমানসমূহে আবার অবতরণ করতে দেখলেন (১৩-১৬) |
E | দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি। অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন দেখলেন (১৭-১৮) |
তো কুরআনে আপনারা এই ধরনের কাঠামোর বিভিন্ন রকম মিল ও বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন। আর এটা মুফাসসিরদের আলোচিত একটি ধারণাকে বুঝতে খুব সাহায্য করে। যাইহোক, এটা আমার নিজের কাজ। এটা কোনো তাফসীরের বই থেকে নেওয়া নয়। তাই যদি আপনারা পরে এসে বলেন, "আপনি এটা কোথা থেকে পেয়েছেন?", আমি আপনাদের সেভাবেই উত্তর দেব যেভাবে আমার মেয়ে উত্তর দিত। যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করতাম, "তুমি এটা কেন করেছ?", সে বলত, "আমার মগজ থেকে"। এটাই ছিল তার উত্তর। তো আমারও আপনাদের জন্য একই উত্তর। আমি দুঃখিত। এটা আমার নিজের কাজ। আমি আমার সহকর্মীদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করি। কুরআনের যুক্তি ও বিষয়বস্তুর এই গঠন আমার কাছে এক মুগ্ধতার বিষয়। আর আমি সত্যিই মনে করি যে এর এক জটিল ও অসাধারণ কাঠামো রয়েছে।
যাই হোক, এটা ছিল একটা সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, আপনাদেরকে সুরার প্রথম অংশের একটি ধারণা দেওয়ার জন্য। এখন আমরা দ্বিতীয় অংশে যাব। আর এই অংশে আমরা أَفَرَأَيْتُمْ (তোমরা কি ভেবে দেখেছ?) শব্দটির মাধ্যমে পূর্বের ঘটনার সাথে একটি তাৎক্ষণিক সংযোগ দেখতে পাব। কিন্তু আমি সে বিষয়ে শেষে কথা বলব। এখন সালাতের আগের এই ৩০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত সেশনে আমি কিছু সাধারণ তথ্যের মধ্যে দিয়ে যেতে চাই— অনেকটা উইকিপিডিয়া-ধাঁচের তথ্য। এগুলো উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া নয়, কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি এগুলো শুধু তথ্য যা আপনাদের জানতে হবে। শুধু শুনলেই হবে। আমি শুধু বিষয়গুলো আলোচনা করে যাব।
আপনাদের তিনটি দেবতা সম্পর্কে কিছু জানতে হবে। আসলে তিনজন দেবী, যাদেরকে আরবরা বিশ্বাস করত। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে কথা বলবেন। তারা হলো লাত, মানাত এবং উযযা। এই আয়াতে লাত ও উযযার কথা থাকবে, আর তৃতীয়জন, মানাত, পরের আয়াতে আসবে। ঠিক আছে?
তো, আমরা এই মূর্তিগুলো সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। কিন্তু হিশাম ইবনুল কালবির লেখা একটি বিখ্যাত প্রাচীন বই আছে, ‘কিতাবুল আসনাম’ বা ‘মূর্তিদের বই’, যেখানে তিনি প্রতিটি মূর্তি সম্পর্কে যা কিছু গবেষণা করে খুঁজে বের করতে পেরেছিলেন তা লিপিবদ্ধ করেছেন। অবশ্য এর তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে কিছু কথা আছে, কারণ আমরা ইসলাম-পূর্ব আরবের কথা বলছি। আর আমরা জানি, আল্লাহ যখন ইসলামকে বিজয় দান করলেন, তখন আমরা মন্দির ও এসব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছিলাম, তাই না? তাই সেই প্রাচীন ধর্মগুলোর ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য খুব কম। তো যে সামান্য তথ্য আমাদের কাছে আছে, আমি তার কিছু অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
কাবা ছিল মূর্তিদের প্রধান মন্দির। কিন্তু আরবদের আসলে সমগ্র আরব জুড়েই মন্দির ছিল। তারা সাধারণত মন্দিরেই মূর্তি রাখত। আর যেহেতু তারা কাবাকে প্রধান মন্দির হিসেবে দেখত। কখনও কখনও তারা মূর্তিকে মানুষের আকারে তৈরি করত। যেমন একজন লোক তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে, অথবা একজন নারী কাপড় দিয়ে ঢাকা—এ ধরনের মূর্তি তাদের ছিল। আবার কখনও কখনও এটা শুধু একটা পাথর হতো। যেমন একটা বড় চৌকো পাথর, অথবা স্টোনহেঞ্জের মতো লম্বা একটা পাথর। এটাই ছিল মূর্তির আকৃতি।
এবার, তারা মূর্তিটা রাখত… তাদের কাছে দুটো সম্ভাব্য জায়গা ছিল। তারা হয় এটাকে কাবার সামনে কোথাও রাখত, অথবা যদি তা করতে না পারত, তাহলে তারা এটাকে অন্য কোনো মন্দিরে তাদের নিজেদের এলাকার কাছাকাছি কোথাও রাখত। এমনকি তারা একটা মন্দিরে একাধিক মূর্তি রাখত। ধরুন, এই মূর্তিটা এক দেবীর, কিন্তু মন্দির নির্মাণ তো বেশ ব্যয়বহুল। তাই সে কি অন্য দেবীর সাথে রুমমেট হতে পারে? তোমরা দুজনে মিলে শেয়ার করতে পারো। তারা এ ধরনের কাজও করত। তখনও রিয়েল এস্টেটের অবস্থা খুব খারাপ ছিল।
যাই হোক, এখন আসি শ্রেণীবিন্যাসে। যদি মূর্তিগুলো শুধু পাথরের তৈরি হতো এবং খোদাই করা না থাকত, যেমন ধরুন কোনো বুদ্ধের মতো দেখতে সুন্দর মূর্তি না, তাহলে তারা তাকে ‘আনসাব’ বলত। কিন্তু যদি তা পাখি, সাপ বা মানুষের মতো দেখতে হতো, তখন সেগুলোকে ‘আওছান’ বা ‘আসনান’ বলা হতো। এই তিনটি শব্দই কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই না? কিন্তু এটাই ছিল তাদের নামকরণের পদ্ধতি।
এবার, যেহেতু তারা কাবার চারপাশে তাওয়াফ করত, তারা ভাবত যে যেকোনো ইবাদতের এটাই সঠিক পদ্ধতি। তাই আরবে তাদের যত মন্দির ছিল, সেখানেও তারা তাওয়াফ করত। তারাও এর চারপাশে ঘুরত। আর যেহেতু কাবাতে কুরবানি দেওয়া হতো, তাই তারাও সেখানে কুরবানি দিত। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি (ইবনুল কালবি) আরও যুক্তি দেন যে আরবে শিরক কীভাবে শুরু হয়েছিল। ইসমাইল (আ.)-এর সন্তানরা যখন অনেক বেড়ে গেল এবং তাদের ধর্ম প্রভাবশালী হলো, তখন তারা সারা আরবে ছড়িয়ে পড়ল। জনসংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছিল যে তারা সবাই মক্কায় থাকতে পারছিল না। তাই তারা আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু যখন তারা ছড়িয়ে পড়ল, তারা কাবাকে খুব মিস করত। কারণ কাবা ইব্রাহিম ও ইসমাইলের সাথে জড়িত। তাই তারা নিজেদের গ্রামের এলাকায় কাবার পাথরের টুকরো নিয়ে যেত এবং সেটার তাওয়াফ করত—যেন তারা নিজেদের তাওয়াফের একটা রীতি তৈরি করে নিয়েছে, কাবাকে মিস করার কারণে। ঠিক আছে? আর পরে সিরিয়া ও অন্যান্য জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য মূর্তি নিয়ে আসা হয়।
যাইহোক, মূল কথা হলো, এই পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই অনুপ্রাণিত ছিল কী থেকে? কাবা থেকে। ইব্রাহিম (আ.) যা করতেন, তারই বিকৃত রূপ।
এবার দেখুন নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি—ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি। ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি হলো, "ওহ, তারা এই মন্দিরগুলোর উপাসনা করছে আর বৃত্তাকারে তাদের চারপাশে ঘুরছে। আর মুসলিমরাও তো এটাই করে। তারা নিশ্চয়ই ওদের কাছ থেকে এটা শিখেছে।" তো তারা কী করে? তারা ব্যাপারটাকে উল্টে দেয়। তারা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়, তাই না? আমরা বলছি, এবং আল্লাহ যা আমাদের শিখিয়েছেন তা হলো, প্রথমে এসেছিল তাওহিদ, আর তারা সেটাকে বিকৃত করে শিরকে পরিণত করেছিল। আর তারা এটাকে উল্টে দিয়ে বলে, "ওহ, দেখ, এই লোকগুলো এখানে তাওয়াফ করছে। কিন্তু তায়েফের কাছেও তাওয়াফ হতো, নাখলাতেও হতো, ওখানেও হতো। সুতরাং এটা একটা আরবীয় প্রথা ছিল।" পশ্চিমা শিক্ষাবিদ বা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিরা যখন এই ইতিহাসের দিকে তাকায়, তারা এভাবেই এটাকে নতুন করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।
যাই হোক, এবার প্রত্যেকটি দেবী সম্পর্কে কিছু তথ্য—লাত, উযযা এবং তারপর মানাত। লাত আসলে মক্কায় ছিল না। লাত ছিল তায়েফের একজন দেবী। এটা একজন নারী বা পুরুষকে প্রতিনিধিত্ব করত, এ নিয়ে তারা দ্বিধায় ছিল। কিন্তু এটা ছিল একটা বড় চৌকো পাথর। আর কুরাইশরা, যদিও এই দেবী তায়েফে ছিল, তারাও এর উপাসনা করত।
আর আপনারা জানেন, আমাদের যেমন নাম আছে—‘আব্দুল্লাহ’ বা ‘আব্দুর রহমান’, তাই না? বা ‘আমাতুল্লাহ’—এ ধরনের নাম। আমাদের এমন নাম আছে যা আল্লাহর সাথে যুক্ত। তো তাদেরও লাতের সাথে যুক্ত নাম ছিল। তারা বলত ‘তাইমুল লাত’ বা ‘যাইদুল লাত’। তারা বাচ্চাদের এমন নাম রাখত। যেমন আমরা নামের শেষে ‘আল্লাহ’ যোগ করি। এমনকি উর্দুতেও আমাদের ‘আল্লাহদিত্তা’ বা এই ধরনের নাম আছে। তো একইভাবে তারা এই দেবীর নাম ব্যবহার করে নাম রাখত।
আর সীরাতে পরে উল্লেখ আছে যে, ইসলাম বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ মুগিরাহ বিন শু'বাকে এটা ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি তায়েফে এর মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তো এই কয়েকটি জিনিসই আমরা জানি। আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। আমরা কেন বেশি কিছু জানি না, সে প্রসঙ্গে একটু পরেই আসব। এটা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
এবার, লাত সম্পর্কে আরেকটু। আমাদের মুফাসসিররা ভাবেন, 'লাত' শব্দটা আসল কোথা থেকে? তারা বলেন, এর মূল সম্ভবত ‘লা-ওয়া-ইয়া’ (ل و ي) যার অর্থ হলো ঝুঁকে পড়া। তাই তারা বলেন, তারা এর উপর ঝুঁকে পড়ত, এর সামনে নত হতো অথবা এর চারপাশে ঝুঁকে ঝুঁকে তাওয়াফ করত। আর একারণেই এর নাম লাত—যার উপর ঝোঁকা হয় বা যার চারপাশে ঘোরা হয়। তো তোমরা লাতের ইবাদত কেন করো? কারণ এটা এমন কিছু যার উপর আমি ঝুঁকে পড়ি। এ কারণেই আমি এর উপর ঝুঁঁকি। এটাই ছিল তাদের যুক্তি।
আরেকটি তত্ত্ব ছিল যে, একজন লোক ছিল যে হাজীদের জন্য খাবার তৈরি করত। যখন লোকেরা হজে যেত, সে তায়েফে তাদের অনেক খাবার দিত। সে যখন খাবার দিত, তখন একটা পাথরের পাশে বসে থাকত। যখন সেই লোকটি মারা গেল, সে অদৃশ্য হয়ে গেল। তখন তারা বলল, "ওহ, সে এই পাথরের ভেতরে ঢুকে দেবতা হয়ে গেছে।" আর যেহেতু লোকটার নাম ছিল ‘লাত’, তাই এই পাথরটা ‘লাত’ হয়ে গেল এবং তারা লাতের উপাসনা শুরু করল। ব্যাপারটা হজম করা একটু কঠিন, কিন্তু জানেন তো, তারা এটাই করত।
অন্য একটি বর্ণনায় আছে, যখন সে মারা গেল, তখন বলা হলো সে মরেনি, বরং সে পাথরের ভেতরে প্রবেশ করেছে। তাই তারা সেই পাথরের উপাসনা শুরু করল এবং তার উপর একটি ঘর তৈরি করল। তারা বলল, "সে মরেনি, সে পাথরের ভেতরে ঢুকে গেছে।" তাই তারা লাত পাথরের উপাসনা শুরু করল। কারণ লোকটা তাদের খুব মজাদার খাবার খাওয়াত।
যাইহোক, এরপর আমরা আসি উযযার কথায়। উযযা লাত এবং মানাতের চেয়ে সাম্প্রতিক। মানাত পুরোনো, লাতও পুরোনো। উযযা হলো সবচেয়ে নতুন। সে যেন এই পাড়ার নতুন সদস্য। সে একটি ‘থিওফোরিক’ উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হয়। আমি এখানে ‘থিওফোরিক’ শব্দটি ব্যবহার করেছি যাতে আপনাদের মনে হয় আমি খুব জ্ঞানী। আমাকেও এটা অভিধানে দেখতে হয়েছে। এই তথ্যটি শরীফ রনদাওয়ার একটি গবেষণাপত্র থেকে নেওয়া। আপনারা চাইলে দেখতে পারেন। তিনি কুরআনে উল্লিখিত প্রাচীন দেব-দেবীদের নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেছেন।
যাই হোক, এর সহজ অর্থ হলো, আমরা যেমন বলি ‘আব্দুল্লাহ’, ‘আব্দুর রহমান’, আর তারা বলত ‘তাইমুল লাত’, তাই না? তো ‘আব্দুল উযযা’ বা ‘আমাতুল উযযা’—এই ধরনের নামগুলো পরে এসেছে। এগুলো প্রাচীন নাম নয়। আর এটা থেকে বোঝা যায় যে এটি তত প্রাচীন দেবতা নয়। এটা ছিল একটি নতুন সংস্করণ। হয়তো ২.০ বা ৮.০, আমি জানি না কোন সংস্করণ। কিন্তু উযযা এমনই ছিল।
আরবিতে যারা পারদর্শী, তাদের জন্য বলছি, ‘উযযা’ হলো ‘আল-আ'য়ায’ এর স্ত্রীলিঙ্গ। যেমন ‘আহসান’-এর স্ত্রীলিঙ্গ ‘হুসনা’, ‘আকবার’-এর ‘কুবরা’, তেমনি ‘আল-আ'য়ায’-এর স্ত্রীলিঙ্গ ‘উযযা’। এখান থেকেই ‘উযযা’ শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হলো, ‘সর্বশক্তিমান নারী’ বা ‘মহাশক্তিশালী’। তারা এভাবেই ভাবত। আর একারণেই কুরাইশদের সবচেয়ে বড় দেবী ছিল আল-উযযা। তারা তার নামে নদী ও উপত্যকা উৎসর্গ করত। তারা কাবার বাইরেও অন্যান্য স্থান উৎসর্গ করত, যেমন—এটা উযযার এলাকা। ‘গাব গাব’ নামে একটি এলাকা ছিল, আর তারা সেই স্থানটিকে উযযার জন্য একটি পবিত্র স্থান হিসেবে উৎসর্গ করেছিল। যতক্ষণ না খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ এসে বললেন, "হুম, এসব শেষ।" আর তাঁকে উযযাকে নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এটা হলো দ্বিতীয় দেবী। আর তৃতীয় দেবী, মানাত। মানাত শব্দটি ‘মানি’ থেকে এসেছে, যার অর্থ তরল বা প্রবাহ। শুক্রাণুকেও ‘মানি’ বলা হয়, কিন্তু রক্ত ঝরাকেও ‘মানি’ বলা যেতে পারে। তারা বলত, তাকে মানাত বলা হয় কারণ যখন নারীরা তার কাছে আসে, তাদের ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং রক্ত ঝরতে থাকে। আর একারণেই তার নাম হয়েছে মানাত। ওয়াও! আচ্ছা, দারুণ তো! এটা তো অসাধারণ। তুমি মানাতকে কেন বিশ্বাস করো? দাঁড়াও বলছি। এই কারণে তোমার এই ধর্ম অনুসরণ করা উচিত। এটা তো খুবই ভালো একটা কারণ!
তো, এই দেবীর উপাসনা হতো ইয়াসরিবে। ইয়াসরিব পরে কী নামে পরিচিত হয়? মদিনা। তো এই দেবী মদিনায় পাওয়া যেত। আর তারা ভাবত যে, হজ ততক্ষণ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ, যতক্ষণ না তারা হজে গিয়ে ফিরে এসে মানাতের দর্শন করে। তা না হলে হজ পূর্ণ হতো না। তারা মানাতকে এতটা শ্রদ্ধা করত।
এবার মূল কথায় আসি। আমাদের কাছে কি এদের সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে, নাকি অল্প? যখন আপনি প্রশ্ন করেন, "এর তাৎপর্য কী ছিল? এটা তাদের জন্য কী করত? এর উৎপত্তির গল্পটা কী?" মানে, আমি তো থর আর ওডিনের উৎপত্তির গল্প জানি। আমি জানি, এখানকার কিছু বাচ্চা ‘গড অফ ওয়ার’ বা এ ধরনের গেম খেলে, তারা জিউসের গল্পটা জানে। অন্তত প্লেস্টেশন সংস্করণটা তো জানে, গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীর সংস্করণটা না জানলেও। এর উৎপত্তির গল্পটা কী? সে কী করে? তোমার কেন তাকে বিশ্বাস করা উচিত? সে কি কোনো নির্দেশনা দেয়? সে, মানে দেবী, কি কখনো কিছু বলেছে? উযযা কি তোমাকে কিছু শিখিয়েছে? তুমি কি তাদের কিছু করতে দেখেছ?
এখন ‘দেখা’ শব্দটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর আগের অনুচ্ছেদটি ছিল কার চূড়ান্ত দর্শন নিয়ে? নবী ﷺ-এর। আর তারা এটা নিয়েই ঠাট্টা করছিল। "ওহ, তিনি আবার কী দেখেছেন? ওহ, তুমি বলছ তিনি জেরুজালেম দেখেছেন, তারপর আসমানে উঠে গেছেন?" আর আল্লাহ এবার ব্যাপারটা ঘুরিয়ে দিয়ে বলছেন, "আচ্ছা, চলো এবার তোমরা যা দেখো, তা নিয়ে কথা বলা যাক।"
أَفَرَأَيْتُمُ اللَّاتَ وَالْعُزَّىٰ
وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَىٰ
"তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযাকে? আর তৃতীয় আরেকটি, মানাতকে?" (সূরা আন-নাজম, ৫৩:১৯-২০)
‘আল-উখরা’ মানে অন্যটি, যেটি আরও দূরে। কারণ ওটা ছিল সেই ইয়াসরিবে, তাই না? তায়েফ কাছে আর ইয়াসরিব দূরে। তাই ‘মানাত আল-সালাসা আল-উখরা’—আরও দূরের তৃতীয়জন।
এবার, আমি চাই আপনারা কিছু একটা বুঝুন। দেখা দুই ধরনের হয়। একটা হলো আমার চোখ দিয়ে দেখা, আর আরেকটা দেখা হলো বোঝা বা উপলব্ধি করা। "তুমি কি কখনো এই পাথরের টুকরোটার দিকে তাকিয়ে দেখেছ? মানে, শুধু তাকিয়ে দেখো। তুমি কি পাথর ছাড়া আর কিছু দেখতে পাও? সত্যি করে তাকিয়ে দেখো তো।" তোমরা প্রশ্ন করছ নবী কী দেখেন আর কী বোঝেন। তোমরা কি এর মধ্যে এর বেশি কিছু বুঝতে পারো? তোমরা কি কখনো… আর এই ‘দেখা’র ধারণাটা হলো বিশ্বাসে আসা, বুঝতে পারা।
আমি এখানে একটা প্রশ্ন লিখেছি—লোকেরা কি এই ধর্মগুলো নিয়ে চিন্তা করে তারপর ধর্মান্তরিত হয়? আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন প্রাচীন আরবে কেউ বলছে, "তোমাকে একটা জিনিসের কথা বলি। এটা একটা পাথরের মতো, বুঝলে? আর এটা বেশ বড়। আর তুমি এটার উপর ঝুঁকে পড়তে পারো। যাবে নাকি? আমার মনে হয় তোমার ধর্ম পরিবর্তন করা উচিত।" তারা কি কোনো বিশ্বাসযোগ্য কারণ দেখিয়েছে? না, দেখায়নি।
আপনারা জানেন লোকেরা কেন এই ধর্মগুলো অনুসরণ করে? কারণ তারা এমন পরিবারে জন্মায় যারা এই ধর্মগুলো অনুসরণ করে। কারণ তাদের চারপাশের সবাই এই ধর্মগুলো অনুসরণ করে। এটা এইজন্য নয় যে তারা নিজেরাই এর মধ্যে সত্য খুঁজে পেয়েছে। তাদের বলা হয়েছিল, "প্রশ্ন করো না, শুধু করো।" আর এই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ, যারা কোনো না কোনো ধর্ম অনুসরণ করে, তারা আসলে নিজেদের ধর্ম নিয়ে তলিয়ে দেখে না। মুসলিমরাও এর অন্তর্ভুক্ত।
এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মুসলিমই মুসলিম কারণ তারা মুসলিম পরিবারে জন্মেছে। তারা আসলে জানে না তারা কেন মুসলিম। আর আজকাল তো যা হয়, তাদের ইসলামের সাথে প্রথম পরিচয়ই হয় ইসলামের কোনো সমালোচনা দিয়ে। আর তারা প্রশ্ন করতে শুরু করে, "আমি কেন মুসলিম? আমি তো কখনো এটা নিয়ে ভাবিনি। এখন যখন ভাবছি, তখন তো অনেক সমস্যা দেখতে পাচ্ছি।" অনেক তরুণ-তরুণীর সাথে এটাই হয়, তাই না? আর তারপর তারা তাদের বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু তাদের বাবা-মাও নিজেরা কখনো ধর্ম নিয়ে তলিয়ে দেখেননি। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, হজ করা—এসবের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন, কারণ তাদের বাবা-মা তাদের এটাই করতে বলেছিলেন। আর তারা সেটাই করেছে। আর তারা এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তারা তাদের কমফোর্ট জোনে আছে। তাই যখন তাদের ছেলে বা মেয়ে কোনো বিখ্যাত নাস্তিকের কাছ থেকে টিকটকে শেখা প্রশ্ন করতে শুরু করে, তখন তারা বলে, "রুকইয়াহ করার সময় হয়েছে!"
তো আল্লাহ যে প্রশ্নটি করছেন, أَفَرَأَيْتُمْ (তোমরা কি ভেবে দেখেছ?)—এর অর্থ হলো, তোমরা কি বিশ্লেষণ করেছ? তোমরা কি ভেবে দেখেছ? তোমরা কি প্রমাণগুলো দেখেছ? আর আজকাল নাস্তিকরা সেই প্রশ্নই করছে: "তুমি কি মহাবিশ্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছ? তুমি কি বিজ্ঞান পড়েছ? কীভাবে তুমি বিজ্ঞান পড়ে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারো? কীভাবে তুমি বিজ্ঞান পড়ে ধর্মে বিশ্বাস করতে পারো?" প্রশ্নটা তারাই করছে। আর মজার ব্যাপার হলো, আল্লাহ তাদের আগেই এই প্রশ্নটি করেছিলেন। আর আল্লাহ বলেননি, "তোমাদের চোখ বন্ধ করো, মহাবিশ্ব নিয়ে পড়াশোনা করো না, নিদর্শনগুলো দেখো না, এসব দেখো না।" তিনি বলছিলেন, "প্রশ্ন করো। দেখো। অন্বেষণ করো।" তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কীভাবে তিনি সৃষ্টি শুরু করেছেন। আমার ঈশ্বর! এটা এমন এক ধর্ম যা অন্য কোনো ধর্মের মতো নয়। এমনকি আরবের ধর্মগুলো এবং বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগুলোও তোমাকে বলে, "চুপ থাকো আর অনুসরণ করো।" তারা এটাই বলে। আর এই ধর্ম বলছে, "তুমি যা অনুসরণ করছ, তা কি তুমি তাকিয়ে দেখেছ? আমি চাই তুমি চোখ খুলে এই ধর্ম অনুসরণ করো, চোখ বন্ধ করে নয়।" أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ (আমি আল্লাহর দিকে আহ্বান করি জাগ্রত জ্ঞান সহকারে)। এটা ধর্মগুলোর জগতে এক বিপ্লব!
কোন ধর্ম তোমাকে বিজ্ঞান পড়তে বলে? আজকাল তোমরা মনে করো, ধর্ম এখানে, আর বিজ্ঞান ওখানে। কিন্তু এই ধর্ম তোমাকে বলছে, "যাও, পড়াশোনা করো।" তোমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেখাচ্ছে। ঈমানদার লোকেরা প্রাচীর তৈরি করতে শেখাচ্ছে, যেমন যুল-কারনাইন ইঞ্জিনিয়ারিং শেখাচ্ছেন। দাউদ (আ.) ধাতব বর্ম তৈরি করছেন। তারা বস্তু তৈরি করছে। আল্লাহ তোমাকে ভ্রমণ করতে, শিখতে এবং অন্বেষণ করতে বলছেন। سِيرُوا فِي الْأَرْضِ (পৃথিবীতে ভ্রমণ করো)। প্রশ্ন করো।
আর আপনারা জানেন, লোকেরা যখন অন্য ধর্মের মানুষকে ধর্মান্তরিত করতে চায়, তখন তারা কী করে? আপনারা কি মনে করেন কোনো খ্রিস্টান যে মানুষকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করতে চায়, সে আমার কাছে আসবে? বা শেখ ইয়াসিরের কাছে বা আমার চেয়েও জ্ঞানী কারো কাছে আসবে? তারা আসবে না। তারা যখন আপনাকে দেখবে, তারা ভাববে, "মনে হচ্ছে সে ইসলাম সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না। ওকে যিশুর কথা বলি।" কারণ ধারণাটা হলো, আপনি আপনার ধর্মে যত কম শিক্ষিত হবেন, আপনাকে বিভ্রান্ত করা তত সহজ হবে, তাই না? কিন্তু জানেন কুরআন কী করেছে? কুরআন বলেছে, "এই প্রশ্নগুলো নাও। যাও রাব্বাইদের জিজ্ঞেস করো। যাও পাদ্রীদের জিজ্ঞেস করো। যাও অন্য ধর্মের সবচেয়ে জ্ঞানী লোকদের এই প্রশ্নগুলো করো।" শুধু সাধারণ মানুষের পেছনে যেও না যারা বেশি কিছু জানে না। যাও তাদের মাথাদের কাছে। আর তাদের বলো, حَاتُوا بُرْهَانَكُمْ (তোমাদের প্রমাণ নিয়ে এসো)। আমরা দেখতে চাই তোমাদের কিতাবে কী আছে। فَأْتُوا بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوهَا (তাহলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তা পাঠ করো)। চলো, এই আলোচনাটা হোক। কুরআন এটাই বলছে।
এখানেও তিনি একই কাজ করছেন। أَفَرَأَيْتُمُ الْلَٰةَ وَالْعُزَّةَ وَمَنَاتَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَى (তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযাকে? আর তৃতীয় আরেকটি, মানাতকে?)। তোমরা এর সাথে তুলনা করছ? তোমরা তো জানোই না এটা কোথা থেকে এসেছে। তোমরা এটার সাথে তুলনা করে প্রশ্ন তুলছ আল্লাহ জিবরীলের মাধ্যমে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে যা দিয়েছেন, তা নিয়ে?
ওহ, দাঁড়াও, আমি তোমাদের ধর্মগুলোর আসল উৎপত্তির কথা বলি। আসল উৎপত্তি হলো এক মনস্তাত্ত্বিক উৎপত্তি।
أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنْثَى
"তোমাদের জন্য কি পুত্রসন্তান আর তাঁর জন্য কন্যাসন্তান?" (সূরা আন-নাজম, ৫৩:২১)
ওহ, তাহলে তোমরা শুধু পুত্র পাবে, আর তিনি শুধু কন্যা পাবেন! এটাই তোমাদের ধর্মের মূল। কিন্তু এটা আরও অনেক বড় কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে। এটা অন্য সব মিথ্যা ধর্ম সম্পর্কে কিছু একটা বলে। এটা সব ধরনের শিরক সম্পর্কে কিছু একটা বলে।
কন্যারা ছিল বোঝাস্বরূপ। তুমি এমন একটি ধর্ম অনুসরণ করো যেখানে তোমার কোনো ধরনের প্রভাব বা সুবিধা আছে। যেমন ক্যাথলিকরা বলবে, "ওহ, অমুক সেইন্ট!" আর তাদের বিভিন্ন ধরনের সেইন্ট থাকবে। আর তারা সেই সেইন্টদের তাবিজ পরবে। কিন্তু আমি ভাবি, তোমরা তো যিশুর থেকেও নিচে নেমে গেছ! শুধু যিশুর তাবিজ পরলেই তো হতো? না, কারণ প্রথমে ঈশ্বর, তারপর যিশু, তারপর সেইন্টরা, আর আসলে তার পরেও শিষ্যরা, তারপর সেইন্টরা। তোমরা তো চার ধাপ নিচে নেমে গেছ। কিন্তু আমি যেমনটা বলেছিলাম, তোমরা প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলছ না, তোমরা শিক্ষকের সাথে কথা বলছ। তাই তারা বিভাগ পরিবর্তন করে নিচে নেমে যায় এবং তাদের সাথে লেনদেন করে। কেন? কারণ এই সেইন্ট প্রভাব খাটাতে পারবে, আমার দোয়া কবুল করাতে পারবে। তাদের এক ধরনের প্রভাব আছে।
আর পুত্ররা ছিল শক্তির প্রতীক এবং কন্যারা ছিল দুর্বলতার প্রতীক। তাই যা শক্তিশালী ও পছন্দের, তা তোমরা নিজেদের জন্য চাও, আর যা দুর্বল, তা তোমরা ঈশ্বরকে দাও। যাইহোক, এটা শুধু বিশ্বাসেই নয়, বরং কাজেও প্রকাশ পায়। যেমন এমন লোকও থাকতে পারে… যেমন আল্লাহ বলেন, لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ (তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের পছন্দের জিনিস থেকে ব্যয় করো)। কারণ লোকেরা সেই জিনিসগুলো থেকে ব্যয় করতে ভালোবাসে যা তারা ভালোবাসে না।
যেমন, এই দেশে যখন আপনি দান করেন, আপনি কর ছাড় পেতে পারেন, তাই না? এটা একটা কর-ছাড়যোগ্য দান যা আপনি নিবন্ধিত অলাভজনক সংস্থাগুলোকে দিতে পারেন। তো আপনি ভাবেন, "যাইহোক, এই টাকাটা তো ট্যাক্সেই যেত। তার চেয়ে আল্লাহকেই দিয়ে দিই।" কিন্তু কর ছাড়ের সর্বোচ্চ সীমা কত? সেটাই মসজিদে আমার দানের সীমা নির্ধারণ করবে। এই হলো… যখন আপনি সিদ্ধান্ত নেন, "ওহ, এর বেশি হলে আমার কমফোর্ট জোনের বাইরে চলে যাবে। না, না, না।" আল্লাহকে এটা দাও। এটাই হলো কন্যাদের সংস্করণ। আমরা পুত্রদের রেখে দেব। তাদের এই তহবিলগুলো দিয়ে দাও।
أَفَأَصْفَاكُمْ رَبُّكُم بِالْبَنِينَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِنَاثًا
"তোমাদের রব কি তোমাদেরকে পুত্রসন্তান দিয়ে বিশেষভাবে অনুগ্রহ করেছেন এবং নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যাসন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছেন?" (সূরা আল-ইসরা, ১৭:৪০)
তিনি ফেরেশতাদের মধ্য থেকে কন্যা গ্রহণ করেছেন। আমি বুঝতে পারছি।
এবার মজার ব্যাপার হলো, যেহেতু ফেরেশতাদের কন্যাদের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল এবং তারা কন্যাদের দুর্বলতা মনে করত, তাই ফেরেশতাদের দুর্বলতার সাথে যুক্ত করা হচ্ছে। যা আল্লাহ ঠিক এর আগেই যা বলেছেন তার সরাসরি বিপরীত।
এবার, আমি এখানকার তরুণদের জিজ্ঞেস করতে চাই, যদি কোনো তরুণ যে ব্যায়াম করে, শক্তিশালী ইত্যাদি, আর কেউ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলে, "কী খবর, মেয়ে?" যদি আপনি কোনো শক্তসমর্থ লোককে মেয়ে বলে ডাকেন, তাহলে কী হবে? জিমে এটা চেষ্টা করে দেখুন। যদি কখনো জিমে যান আর সেখানকার সবচেয়ে বড় লোকটিকে দেখেন, গিয়ে বলুন, "কী খবর, মেয়ে?" এরপর কী হবে? আজকাল কী হতে পারে আমি ঠিক জানি না। কিন্তু তারা কি অপমানিত হবে? হ্যাঁ। "তুই কার সাথে লাগছিস, অ্যাঁ?"
তো যখন তোমরা ফেরেশতাদের নারী বলছ এবং তাদের দুর্বলতার সাথে যুক্ত করছ, আর তোমরা এই সমস্ত কথা বলছ যখন জিবরীল (আ.) আসলে আশেপাশে আছেন এবং ফেরেশতাদের বাহিনী আশেপাশে আছে, তোমরা কি জানো তোমরা কার সাথে লাগছ? মানে, একটা তো হলো তোমরা আল্লাহর সাথে লাগছ, সেটা তো আছেই। তোমরা আল্লাহর রাসূল ﷺ-দের সাথে লাগছ। কিন্তু তোমরা ফেরেশতাদের সাথেও লাগছ, বোকার দল!
এটা একটা হুমকির মতো। এটা আসলে একটা হুমকি। আর এটা… আমি আপনাদেরকে সূত্রের কথা বলেছিলাম, তাই না? যেমন প্রত্যেক সুরার একটা সূত্র বা ধারা থাকে। যেমন শুরুতে কুরআনের সূত্র। এটা সূরা আত-তুর-এর একটি সূত্র। সূরা আত-তুর-এ আল্লাহ বলেন, "তাঁর কি কন্যা থাকবে আর তোমাদের পুত্র থাকবে?" তিনি একই প্রশ্ন করেছিলেন। এখন তিনি সেই সূত্রটি আবার তুলে আনছেন। যদি এই সপ্তাহে আমাদের আরও সময় থাকত, আমি আপনাদের দেখাতাম কীভাবে সেই সূত্রটি বিকশিত হয়েছে। যেমন, ওই সুরায় এটা কীভাবে বলা হয়েছে আর এই সুরায় কীভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি আপনাদেরকে এটার উপর তাদাব্বুর বা গভীর চিন্তা করার জন্য ছেড়ে দিচ্ছি, কারণ আপনারা তো কিছুটা সেটার জন্যও এখানে এসেছেন, তাই না?
তো, আরও একটা… শেষ একটা ছোট বিষয়। আসলে এটা ছোট বিষয় নয়, তাই আমি এটা এখন করব না। আমি এখানেই থামব, ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এর পর থেকে চালিয়ে যাব।