সুরা আন নাজম (পর্বঃ১২)

Spread the love

আজকে আমি যা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি, তা নিয়ে আমি সত্যিই অভিভূত। এটা অত্যন্ত শক্তিশালী। আমার প্রথম দু'আ আল্লাহর কাছে এই যে, আজকে যা শিখলাম এবং অন্তরে ধারণ করলাম, আমি দু'আ করি যেন এর প্রভাব আপনাদের অন্তরে আমার চেয়েও অনেক বেশি হয়। কারণ মূল লক্ষ্য শুধু আল্লাহর কথা বোঝা নয়, বরং তা দিয়ে আমাদের অন্তরকে প্রভাবিত করা।

তাই আমি এই দু'আ দিয়ে শুরু করছি যে, আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করেন। আল্লাহ যেন আমাদের হৃদয়কে কুরআনের আলো দিয়ে উজ্জ্বল করে দেন।

চলুন, এবার সরাসরি কাজে নেমে পড়ি। এখন পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করেছি তা হলো জিবরীল (আঃ) এর প্রথম দর্শন, যা সূরা আন-নাজম এর ১২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত ছিল। আয়াত নম্বর ১৩ থেকে ১৮ পর্যন্ত—এবং আজকে আমার লক্ষ্য শুধু ১৮ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পৌঁছানো, এটুকুই আমরা করব। যদি আমি ১০ মিনিটেই ১৮ নম্বর আয়াতে পৌঁছে যাই, তাহলেও আমি আর এগোবো না। কারণ আমি চাই আপনারা ১৮ নম্বর আয়াত পর্যন্ত যা ঘটবে, তা যেন ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেন।

আয়াত ১৩ থেকে ১৮ পর্যন্ত যা ঘটতে চলেছে, তা হলো জিবরীল (আঃ) এর দ্বিতীয় দর্শন। কিন্তু এই দর্শন পৃথিবীতে ঘটেনি, বরং এটা ঘটেছিল যখন নবী ﷺ কে এক মহিমান্বিত ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে কোনো সৃষ্টি আগে কখনো যায়নি। এমনকি ফেরেশতাদেরও তার উপরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। আর সেখান থেকে আল্লাহ বর্ণনা করছেন যে নবী ﷺ কী দেখেছিলেন এবং কী অনুভব করেছিলেন। আর আমরা সেখান থেকেই শুরু করতে যাচ্ছি, আয়াত নম্বর ১৩ থেকে।

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ
(সূরা আন-নাজম, ৫৩:১৩)
"এবং তিনি অবশ্যই তাঁকে"—অর্থাৎ জিবরীলকে—"আরেকবার অবতরণ করতে দেখেছিলেন" বা এক নিম্ন অবস্থানে দেখেছিলেন।

আরবীতে 'নুযুল' (نُزُول) শব্দের অর্থ হলো নীচে থাকা বা নীচে নামা। যেমন, কুরআনের জন্য 'ইনযাল' (انزال) শব্দটি ব্যবহৃত হয়, কারণ কুরআন ঊর্ধ্বলোক থেকে নীচে নেমে আসে, তাই না? ফেরেশতারাও নীচে নেমে আসে—تَتَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ (সূরা আল-কদর, ৯৭:৪)—কারণ তাঁরা নীচে নেমে আসছেন। এখানে 'নাযলাতান' (نَزْلَةً) মানে হলো এক নিম্ন অবস্থানে।

এটা কিন্তু প্রথম দর্শনের সাথে পুরোপুরি বিপরীত, যেখানে আপনি পড়েছেন বা শুনেছেন যে, তিনি জিবরীলকে কোথায় দেখেছিলেন? وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَىٰ (সূরা আন-নাজম, ৫৩:৭)—"তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ দিগন্তে।" সুতরাং এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চিত্র। প্রথমবার তিনি তাঁকে দেখছেন একেবারে উপরে, আর এখন তিনি তাঁকে দেখছেন এক নিম্ন অবস্থানে। এর মানে কী হতে পারে? আমি তো ভেবেছিলাম তিনি ঊর্ধ্বলোকে গিয়েছিলেন, আর সেখানে তিনি জিবরীলকে নিম্ন অবস্থানে দেখছেন?

প্রথমে দেখি, এর মানে কী হতে পারে। ইমাম আল-আলুসি একটি চমৎকার বিষয় লক্ষ্য করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আল্লাহ কেন 'নাযলাতান' (نَزْلَةً) শব্দটি ব্যবহার করলেন, 'মার্রাতান' (مَرَّةً) এর পরিবর্তে? কারণ وَلَقَدْ رَآهُ مَرَّةً أُخْرَىٰ বললে এর অর্থ হতো, "তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন।" কিন্তু আল্লাহ শুধু "আরেকবার" বলেননি, তিনি বলেছেন, "এক অবতরণে আরেকবার।" তার মানে তিনি ‘আরেকবার’ শব্দটিকে ‘এক অবতরণ’ বা ‘এক নিম্ন অবস্থান’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন।

ইমাম রাযি এই শব্দটি নিয়ে গভীর আলোচনা শুরু করেন এবং বলেন যে, এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নবী ﷺ এর ঊর্ধ্বলোক ভ্রমণের যে বর্ণনা আমরা পাই, তা থেকে জানা যায় যে, এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক স্থানে পৌঁছেছিলেন যেখানে তাঁকে জিবরীল (আঃ) কেও ছাড়িয়ে যেতে হয়েছিল। আর যখন তিনি দেখলেন যে জিবরীল (আঃ) তাঁর সাথে আসছেন না, তখন জিবরীল (আঃ) তাঁকে বলেছিলেন, "আমি যদি এক চুল পরিমাণও সামনে বাড়ি, আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাবো।" আমার আর সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নেই।

যেমন ধরুন, পৃথিবী থেকে সূর্যের একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব আছে। কোনো বস্তু যদি সূর্যের উত্তাপের খুব বেশি কাছে চলে যায়, তাহলে কী হবে? জ্বলে উঠবে, তাই না? সেটার উত্তাপ সহ্য করতে পারবে না। ঠিক তেমনি, ওই স্থানটির তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে জিবরীল (আঃ) তা সহ্য করতে পারতেন না। তাই তাঁকে নীচে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ নবী ﷺ কে আরও এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তখন আল্লাহর রাসূল ﷺ আরও এগিয়ে গেলেন, তাঁর একটি সাক্ষাৎ হলো এবং তিনি এমন কিছু দেখলেন, যা শুধু তিনিই দেখেছেন। আমরা জানি না সেটা কী, আমরা পরে এ নিয়ে আলোচনা করব। এবং ফেরার পথে তিনি জিবরীল (আঃ) কে আবার দেখতে পেলেন। কিন্তু এবার যখন তিনি তাঁকে দেখছেন, তখন কে উপরে? এবার রাসূলুল্লাহ ﷺ উপরে!

তাই 'নাযলাতান' (نَزْلَةً) শব্দটি এখন পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠে। কারণ প্রথমবার নবী ﷺ ছিলেন পৃথিবীতে আর জিবরীল (আঃ) ছিলেন আকাশে। কিন্তু এখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আসলে আরও উঁচুতে, এবং তিনি যখন নীচে নামছেন, তিনি জিবরীল (আঃ) কে নিজের থেকেও নিম্ন অবস্থানে দেখতে পাচ্ছেন। এই চিত্রটিই নবীর ﷺ ঊর্ধ্বলোকে আরোহণের বর্ণনা দিচ্ছে। আর যারা বলে যে এই ভ্রমণটি কেবল একটি আধ্যাত্মিক ভ্রমণ ছিল, যা তাঁর স্বপ্নে বা অবচেতন মনে ঘটেছিল, 'নাযলাতান' শব্দটি তাদের সেই যুক্তিকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। এটা এতটাই বাস্তব এবং চাক্ষুষ একটি ছবি যে, এই ভ্রমণটি আসলেই দৈহিকভাবে ঘটেছিল অদৃশ্য জগতে, এবং সেখানেই এই দর্শনটি ঘটেছিল।

তো, যখন তিনি নীচে নামার পথে জিবরীলকে দেখলেন, তিনি তাঁকে একটি বরই গাছের (Lote Tree) পাশে দেখেছিলেন। আপনি যদি না জানেন বরই গাছ কী, তাহলে আপনার গুগল ইমেজে সার্চ করা উচিত। আমি এখানে ছবিটা দিতে পারতাম, কিন্তু আমি চাই আপনারা নিজেরা একটু হোমওয়ার্ক করে বরই গাছের ছবি দেখুন। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, এই গাছ আমাদের পরিচিত পৃথিবীর বরই গাছের মতো হবে না।

আমি একটা উদাহরণ দিই। এই পৃথিবীতে ফল আছে, তাই না? জান্নাতেও ফল আছে। দুটো কি এক? না। এই পৃথিবীতে গাছ আছে, জান্নাতেও গাছ আছে। দুটো কি এক? আমাদের এই পৃথিবীতে নদী আছে, সেখানেও নদী আছে। দুটো কি এক? না। নবী ﷺ বলেছেন, (জান্নাতে) এমন কিছু আছে যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, আর কোনো মানুষের অন্তর তা কল্পনাও করতে পারেনি। এর মানে হলো, আপনি সেখানে এমন জিনিস দেখবেন যা আপনি আগে কখনো দেখেননি।

ধরুন, কেউ জান্নাতে গিয়ে বলল, "আমার খুব চিকেন শাওয়ারমা খেতে ইচ্ছে করছে, চিকেন শাওয়ারমার কথা খুব মনে পড়ছে।" আর আপনি জানেন, আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। যদি আপনি সত্যিই একটা চিকেন শাওয়ারমা চান, তা আপনার সামনে হাজির করা হবে, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি সেখানে এমন জিনিস দেখবেন যা আপনি আগে কখনো দেখেননি। আর আমাদের দেখা, আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো কেবল আমাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। আপনি একটা সুন্দর গাড়ি দেখলেন, মনে হলো, "ইস! যদি এই গাড়িটা আমার হতো!" আপনি একটা সুন্দর জায়গার ছবি দেখলেন, মনে হলো, "ইস! যদি ওই জায়গায় বেড়াতে যেতে পারতাম!" আমাদের কল্পনা সীমিত। আমরা এর বাইরে কিছু দেখিনি, তাই আমরা তা চাইতেও পারি না।

তাই জান্নাতে গেলে আমাদের চাওয়াগুলোও বিকশিত হবে, কারণ আমরা এমন জিনিস দেখব যা আমরা আগে দেখিনি, এমন জিনিস খাব যা আগে খাইনি, এমন জিনিস পান করব যা আগে পান করিনি। কিন্তু যেহেতু মানুষের শব্দভান্ডার তার দেখা জিনিসগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি—যেমন এটাকে মগ বলে, এটাকে বই বলে—আমরা জিনিস দেখি এবং সেগুলোর নাম দিই। কিন্তু আমরা তো কখনো জান্নাতে যাইনি, তাই আমরা জান্নাতের জিনিসগুলোর নাম দিতে পারি না।

কিন্তু আল্লাহ কুরআনে যা করেন, তিনি বলেন সেখানে গাছ আছে, ফল আছে, মাংস আছে, সঙ্গী-সঙ্গিনী আছে, মণি-মুক্তা আছে, আসন আছে। তিনি এমন শব্দ ব্যবহার করেন যা আমাদের এই পৃথিবীর পরিচিত জগতের। কিন্তু তিনি এটা করছেন কারণ আমরা সীমিত, কারণ আমাদের সেই জগতে প্রবেশাধিকার নেই। তাই তিনি বলেন, সবচেয়ে কাছের যে জিনিসটা দিয়ে তোমাকে জান্নাতের একটা ধারণা দেওয়া যায়, তা হলো কুশন। আপনি ভাববেন, "কুশন? হ্যাঁ, ওগুলো তো আমি বড় বড় শপিং মলে দেখি। আচ্ছা, কুশন আমি বুঝি।" কিন্তু যখন আপনি জান্নাতে যাবেন আর সেখানকার কুশন দেখবেন, আপনি বলবেন, "হে আল্লাহ! এ তো কোনো সাধারণ কুশন নয়! আমার খোদা, এর কথাই তিনি বলেছিলেন!" সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা! আপনারা কি বুঝতে পারছেন আমি কী বলছি?

সুতরাং কুরআনে জান্নাতের জন্য যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা আসলে এই দুনিয়ার ভাষা থেকে ধার করা, যদিও তা বাস্তবে এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি কিছু।

এই ধারণার উপর ভিত্তি করে, তিনি জিবরীলকে একটি বরই গাছের পাশে দেখছেন। এটা একটা 'সিদরা' (سدرة), কিন্তু আপনি যদি বরই গাছের ছবি গুগল করেন, সেটা কি আবশ্যিকভাবে একই রকম হবে? না। এটা এমন কিছু… এখন আমার মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করলো, বরই গাছের মধ্যে এমন কী থাকতে পারে… 'সিদরা' (سدرة) শব্দের মূল অক্ষরগুলো হলো সিন, দাল এবং র। এর মূল অর্থ বরই গাছ হলেও, এর কিছু গৌণ অর্থও কী হতে পারে? কিছু বর্ণনা আছে, কিন্তু সেগুলোতে যাওয়ার আগে আমি আপনাদের এই শব্দটির গৌণ অর্থগুলো বলব।

'সিদার' (سدار)—যখন কোনো তাঁবুর উপর পর্দা ফেলা হয়, তাকে আরবীতে 'সিদার' বলা হয়। লম্বা চুল যখন কেউ ছেড়ে দেয়, সেটাও 'সিদার' (سَدَرَ)। যখন কেউ পোশাক দিয়ে নিজেকে আবৃত করে, সেটাও 'সিদারা' (سدارة)। যখন কারো দৃষ্টি আবৃত হয়ে যায় এবং সে স্পষ্টভাবে দেখতে পারে না, তার দৃষ্টিও 'সিদার' অনুভব করছে।

সুতরাং একটি সাধারণ থিম ফুটে উঠছে: 'সিদরা'র সাথে সম্পর্কিত সব শব্দের মধ্যেই একটা overarching বা আবৃত করে ফেলার, একটা ছায়া ফেলার, একটা বাধা তৈরি করার ধারণা রয়েছে। যেন আল্লাহ এমন একটি গাছের বর্ণনা দিচ্ছেন যা বিশাল এবং যা ছায়া ফেলে, যা সবকিছুকে ঢেকে দেয়।

এবং তিনি শুধু 'সিদরা' বলেননি, তিনি বলেছেন 'আল-মুনতাহা' (الْمُنْتَهَىٰ)। 'মুনতাহা' মানে হলো সর্বশেষ বা শেষ সীমানা। তাহলে এটা হলো একেবারে শেষ সীমানার গাছ।

আসুন, এটা একটু কল্পনা করার চেষ্টা করি। রাসূল ﷺ নীচে নামছেন। তিনি যতদূর চোখ যায়, সেই স্বর্গীয় দিগন্তের একেবারে শেষ প্রান্তে কী দেখতে পাচ্ছেন? তিনি একটি গাছ দেখতে পাচ্ছেন। এটাই তিনি শেষ দেখতে পাচ্ছেন। আর সেই গাছের পাশে তিনি কাকে দেখছেন? জিবরীল (আঃ) কে। সেই দূরের দৃশ্যের শেষ প্রান্তে তিনি জিবরীল (আঃ) কে দেখতে পাচ্ছেন।

এখন এটা বেশ আকর্ষণীয়। যদি আপনি প্রথম দর্শনের ভাষার সাথে তুলনা করেন, যখন তিনি জিবরীল (আঃ) কে দেখেছিলেন, তখন জিবরীল (আঃ) পুরো আকাশ জুড়ে ছিলেন, মনে আছে? কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি তাঁকে অনেক দূরে একটি গাছের পাশে দেখছেন। এতে জিবরীল (আঃ) কে বিশাল মনে হচ্ছে, নাকি ছোট? ছোট। কারণ আমরা এখন প্রথম আসমানে নেই। আমরা এমন এক grand (মহিমান্বিত) জায়গায় আছি, যেখানে এই বিশাল প্রেক্ষাপটে জিবরীল (আঃ) কে রাতের আকাশের একটি তারার মতো মনে হচ্ছে। এই পৃথিবীতে তিনি অপ্রতিরোধ্য আর বিশাল লাগছিলেন, আর সেখানে তিনি শুধু একটা বিন্দুর মতো, অনেক দূরে সেই গাছের পাশে। বুঝতে পারছেন? আল্লাহ এই শব্দগুলোর মাধ্যমে দ্বিতীয় দর্শনের এই ছবিটিই আঁকছেন।

'আল-মুনতাহা' শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমি এক সেকেন্ডের মধ্যেই দেখাব কেন। 'আল-মুনতাহা' মানে হলো সর্বশেষ সীমানা, শেষ যা কিছু দেখা যায়। আর সেই গাছের ঠিক পাশেই, অথবা সেই নিম্ন অবস্থানের পাশেই, যেখানে জিবরীল (আঃ) আছেন, সেখানেই আছে جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ (জান্নাতুল মা'ওয়া)—চূড়ান্ত আশ্রয়ের বাগান। 'মা'ওয়া' (مَأْوَىٰ) মানে আশ্রয়, 'জান্নাতুল মা'ওয়া' মানে আশ্রয়ের বাগান।

এখন এই আশ্রয়ের বাগানটা আবার কী? তো, সেখানে আছে গাছটি, আর সেই গাছের কাছেই আছে আশ্রয়ের বাগান। এবং নবী ﷺ জিবরীলকে দেখতে পাচ্ছেন, গাছটি দেখতে পাচ্ছেন, এবং তিনি আশ্রয়ের বাগানটিও দেখতে পাচ্ছেন।

আলেমগণ বিতর্ক করেছেন, এই আশ্রয়ের বাগানটি কী হতে পারে। প্রথম যুক্তি হলো, এবং এই আয়াতটি তার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় যে, জান্নাত আকাশেই অবস্থিত, এই পৃথিবীতে নয়। ইহুদিদের কিছু ঐতিহ্য আছে যেখানে বলা হয় এই পৃথিবীই একদিন স্বর্গে পরিণত হবে। কিছু মুসলিম আলেমও এই মত পোষণ করেছেন যে, এই পৃথিবীই একদিন রূপান্তরিত হয়ে জান্নাতে পরিণত হবে। কিন্তু কুরআন ভিন্ন দিকে ইঙ্গিত করছে। এই আয়াত থেকে কিছু আলেম বলেন, "দেখুন, এটাই সেই জান্নাত যেখানে আমরা একদিন যাবো।" আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর জান্নাত দান করুন। এটা উপরেই আছে।

আর নবী ﷺ তা দূর থেকে দেখতে পাচ্ছেন। যদি এটাই সত্যি হয়, তাহলে আরও একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার আছে। আল্লাহ কুরআনে জান্নাতের আকার সম্পর্কে আমাদের কিছু বলেছেন। তিনি দুই জায়গায় বলেছেন যে জান্নাতের আকার, জান্নাতের ভূখণ্ড, সাত আসমান এবং পৃথিবী মিলিয়ে যা হয়, তার সমান। এটা কতটা বিশাল, আর আমি আপনাদের বলেছিলাম যে প্রথম আকাশই ১৩.৯ বিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে, তাই না? জান্নাত শুধু প্রথম আকাশ নয়, এটি সাতটি আকাশ এবং পৃথিবী মিলিয়ে যে আকার হয়, তত বড়।

কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ গাছটিকে দূর থেকে দেখছেন এবং এর চারপাশে পুরো জান্নাতটিকেও দূর থেকে দেখছেন, যেন এটা শুধু একটা বাড়ি বা একটা ছোট বাগান। যেন সাত আসমান ও জমিন মিলে যা হয়, তা তিনি যেখানে আছেন, সেখান থেকে একটা ছোট্ট জায়গা মাত্র। এটা কোনো বিশাল ব্যাপার নয়, বরং তাঁর দৃষ্টির একটা অংশ মাত্র, একেবারে দূরের প্রান্তে। মানুষ! এটা কী জায়গা, যেখানে সমস্ত অস্তিত্বই ক্ষুদ্র হয়ে যায়? তিনি আল্লাহর আরশের কাছাকাছি, তাই না? আর আল্লাহর আরশের কাছে, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিই অতি ক্ষুদ্র, খুবই ছোট। আর তাই নীচে নামার পথে তিনি তা দূর থেকে দেখছেন।

ইমাম আল-আলুসি স্পষ্টভাবে বলেছেন, কিছু মানুষ বলেছে এটা সেই জান্নাত হতে পারে না যেখানে আমরা যাব। এটা নিশ্চয়ই ফেরেশতাদের জন্য অন্য কোনো জান্নাত, কারণ জিবরীল (আঃ) সেখানে আছেন, অন্য ফেরেশতারাও সেখানে থাকেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, না, প্রথম অর্থটিই সুস্পষ্ট—এটাই সেই জান্নাত যেখানে আমরা আমাদের চূড়ান্ত আশ্রয় খুঁজে পাবো। عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ

এখন, এই আয়াতগুলোর আরেকটি পাঠ আছে যা ইমাম আল-আলুসি উল্লেখ করেছেন… এর অর্থ দাঁড়ায়, জিবরীল (আঃ) সেখানে ছিলেন এবং তাঁর চারপাশেই আশ্রয় তাঁকে ঢেকে ফেলেছিল। এবং এর মানে হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো এক আশ্রয় জিবরীল (আঃ) কে ঢেকে ফেলেছিল, অথবা এর অর্থ এমনও হতে পারে যে, তা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ঢেকে ফেলেছিল।

আমাদের বিরতির আগে আমি চাই আপনারা আমার সাথে এই বিষয়টি নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন যা কোনো সৃষ্টি আগে কখনো করেনি, এবং তিনি সেই সাক্ষাৎ থেকে নীচে নামছেন। আর নীচে নামার সময় তিনি জিবরীল (আঃ) কে দেখছেন। জিবরীল (আঃ) এর প্রধান কাজ কী, যা আমরা জানি? আমরা জানি তিনি ওহীর ফেরেশতা, তাই না? তিনি এখানে কোথায় আছেন? একটি গাছের পাশে। গাছটির পাশে কী আছে? জান্নাতুল মা'ওয়া।

জান্নাতুল মা'ওয়া একটি ঐতিহাসিক স্থান। মানবতার গল্প তো এই বাগানেই শুরু হয়েছিল। প্রথম মানুষ সেখানেই ছিলেন, শয়তানও সেখানেই ছিল। যে নাটকীয় ঘটনা আমাদের এই গ্রহে নিয়ে এসেছে, তা সেখানেই ঘটেছিল। আর নবী ﷺ এই ঐতিহাসিক স্থানটি দেখছেন।

যখন আপনি কোনো ঐতিহাসিক স্থানে যান, আপনার অন্তর যেন সেই মুহূর্তে ভ্রমণ করে, তাই না? আমি যখন উমরাহ বা যিয়ারতে যাই, আমি মক্কায় মাক্কী সূরা আর মদীনায় মাদানী সূরা তিলাওয়াত করার চেষ্টা করি। আর আমি ভাবার চেষ্টা করি, "জিবরীল এখানেই কোথাও আসছিলেন, নবীর কাছে এটা পৌঁছে দিচ্ছিলেন।" অথবা যখন আপনি মসজিদে (কিবলাতাইন) যান, আমি কিবলা পরিবর্তনের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করি, কারণ সেগুলো সেখানেই নাযিল হয়েছিল। ফেরেশতা এখানেই কোথাও ছিলেন আর এই আয়াতগুলো নাযিল হচ্ছিল। আমি সেই মুহূর্তটা বোঝার চেষ্টা করি।

এই যে স্মৃতিস্তম্ভগুলো, এই স্থানগুলো যা ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় 'শা'আইর' (شَعَائِر)। যেমন মাকামে ইবরাহীম আল্লাহর 'শা'আইর' এর অংশ। সাফা ও মারওয়া আল্লাহর 'শা'আইর' এর অংশ। 'শা'আইর' শব্দটি এসেছে 'শু'ঊর' (شعور) থেকে, যার অর্থ 'অনুভূতি'। তাই যখন আপনি ওই স্থানগুলোতে থাকেন, সেগুলো আপনার ভেতরে এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে। যখন আপনি সাফা ও মারওয়ার মাঝে দৌড়ান, আপনার অনুভব করার কথা যা ইসমাইলের মা অনুভব করেছিলেন। বুঝতে পারছেন? যখন আপনি তাওয়াফ করেন, আপনার অনুভব করার কথা যা ইবরাহীম (আঃ) অনুভব করেছিলেন, যা নবী ﷺ অনুভব করেছিলেন যখন মক্কা বিজয় হয়েছিল। এই স্থানগুলোতে গেলে আপনার কিছু অনুভব করার কথা। এ কারণেই এদেরকে 'শা'আইর' বলা হয়।

এবার কল্পনা করুন, কোনো সাধারণ 'শা'আইর' নয়, তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে থেকে দেখছেন সমস্ত ঐতিহাসিক স্থানের চেয়েও সবচেয়ে ঐতিহাসিক স্থান—মানবতার উৎসস্থল। তিনি তা সেখানেই দেখতে পাচ্ছেন। আর যখন আদম (আঃ) কে নীচে পাঠানো হচ্ছিল, আল্লাহ তাঁকে বলেছিলেন, "যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসবে…" আদম ও হাওয়া এবং তাঁদের সকল সন্তানকে বলা হয়েছিল, "যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসবে, যে তা অনুসরণ করবে, তার কোনো ভয় থাকবে না এবং সে দুঃখিতও হবে না।"

আর রাসূলুল্লাহ ﷺ হলেন সেই শেষ কিস্তি, সেই সমস্ত ওহীর নক্ষত্রপুঞ্জের শেষ 'নাজম' (নক্ষত্র), যার কথা সেই সংলাপে বলা হয়েছিল। যখন আল্লাহ আদমকে বলেছিলেন, "যখনই হেদায়েত আসবে, যে তা অনুসরণ করবে…"—সেই হেদায়েতের সর্বশেষ রূপ কী? রাসূলুল্লাহ ﷺ। আর তিনি সেই গাছটির দিকে তাকাচ্ছেন, তিনি জিবরীলের দিকে তাকাচ্ছেন যিনি সেই ওহী পৌঁছে দেন, এবং তিনি সেই জান্নাতের দিকে তাকাচ্ছেন যা আমাদের আসল বাড়ি ছিল এবং যেখানে আমাদের ফিরে যাওয়ার কথা।

আপনি কি এক মুহূর্তের জন্য কল্পনা করতে পারেন যে সেই মুহূর্তে তিনি তাঁর কাঁধে কী রকম দায়িত্ব অনুভব করেছিলেন? এক মুহূর্ত ছিল যখন প্রথমবার ফেরেশতা তাঁর কাছে এসে ওহী দিয়েছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই পৃথিবীর সমস্ত ভার নিজের কাঁধে অনুভব করেছিলেন। কিন্তু এটা অন্য এক স্তরের। তিনি সবকিছু আবার নতুন করে দেখছেন। আর এখন এমন নয় যে ফেরেশতা উচ্চ অবস্থানে আর তিনি নিম্ন অবস্থানে; বরং এখন তিনি উচ্চ অবস্থানে এবং তিনি ফেরেশতা জিবরীলের দিকে তাকাচ্ছেন। শুধু কল্পনা করুন সেই মর্যাদা, সেই অবস্থান যা আল্লাহ তাঁকে দিয়েছেন। আর আল্লাহ আপনাকে যত উচ্চ মর্যাদা দেন, তিনি আপনার উপর তত ভারী দায়িত্ব অর্পণ করেন। আপনি নতুন করে উপলব্ধি করতে পারবেন সেই কথাগুলো: "আমরা তোমার উপর এক ভারী বাণী অর্পণ করতে যাচ্ছি।"

তো তিনি জান্নাত দেখছেন, তিনি পুরো জান্নাত দেখছেন, আমাদের ভবিষ্যৎ বাড়ি দেখছেন। আল্লাহ কেন এই ওহী দিয়েছেন? যাতে মানুষ এই জায়গায় পৌঁছানোর পথ খুঁজে নিতে পারে। আর তিনি জিবরীল (আঃ) কে দূরের দিগন্তে দেখছেন।

কিন্তু তারপর অন্য কিছু ঘটে। তিনি নীচে নামছেন… অথবা তিনি জিবরীল (আঃ) এর উপরে সেই স্থানে আছেন এবং জিবরীলের দিকে তাকাচ্ছেন। আর তারপর এমন কিছু ঘটে যার অর্থ আমরা কখনোই জানতে পারব না। আল্লাহ তা উল্লেখ করেছেন, যদিও। তিনি বলেন:

إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ
(সূরা আন-নাজম, ৫৩:১৬)
"যখন হঠাৎ করেই," কারণ 'إذ' এর মধ্যে আকস্মিকতার অর্থ থাকতে পারে, "হঠাৎ করেই সেই গাছটিকে ঢেকে ফেলছিল তা, যা ঢেকে ফেলে।"

তিনি গাছটি দেখেছিলেন, জিবরীলকে দেখেছিলেন, বাগানটি দেখেছিলেন, আর এখন গাছটি নিজেই আবৃত হয়ে যাচ্ছে। কী সেই গাছটিকে আবৃত করতে পারে? আল্লাহ বলেন, "এমন কিছু যা তাকে ঢেকে ফেলে।" কিন্তু সেটা কী? নবী ﷺ দেখছেন কিছু একটা উপরে উঠছে এবং তা গাছটিকে ছায়াচ্ছন্ন বা আবৃত করে ফেলছে। আর এখন তিনি আর গাছটি দেখতে পাচ্ছেন না, কারণ যা তাকে ঢেকে ফেলেছে, তা তাকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে।

এই বিষয়ে আমি… শায়খ সোহাইবের সাথে কিছু শেয়ার করেছিলাম, কারণ আমি এসব নিয়ে ভাবি আর আমার মাথায় অদ্ভুত চিন্তা আসে। তখন আমি ভাবি, হয়তো আমিই পাগল। তাই আমি আমার আলেম বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি যারা আমার মতো অতটা পাগল নন। আর তাঁরা বলেন, "এটা অতটা অদ্ভুত নয়, এটা ঠিক আছে।" তো, এই চিন্তাটা সবুজ সংকেত পেয়েছে, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

গাছটির নাম কী ছিল? কিসের গাছ? 'আল-মুনতাহা'—শেষ সীমা। এটা হলো সেই সীমা, যার বাইরে আল্লাহর সৃষ্টি যেতে পারে না। এমনকি জিবরীলও এর বাইরে যেতে পারেননি। সুতরাং এটা যেন আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টির জন্য শেষ সীমানা। আর তিনি ঠিক সেই শেষ সীমানার পাশেই আছেন।

কিন্তু এরপর এমন কিছু এলো যা এমনকি জান্নাতকেও ঢেকে ফেলল। তাহলে কি জান্নাতের চেয়েও উচ্চ কোনো লক্ষ্য থাকতে পারে? কিছু মানুষ আছে যারা বলে, "জান্নাত পাই বা না পাই, আমি শুধু আল্লাহকে পেতে চাই, আমি চাই আল্লাহ আমার উপর সন্তুষ্ট থাকুন। আমার জন্য এটাই জান্নাতের চেয়েও বড়।"

আল্লাহ সূরা ইনসানে জান্নাতের এত বর্ণনা দিয়েছেন—খাবার, পানীয়, সঙ্গ, পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ—সবকিছু। আর তারপর আল্লাহ নিজে আপনাকে পানীয় পরিবেশন করবেন। আপনার রব আপনাকে একটি পানীয় পরিবেশন করবেন। আর তিনি শুধু পানীয়ই দিচ্ছেন না… তিনি বলছেন, "এই হলো তোমার চূড়ান্ত পুরস্কার।" অন্য সব পুরস্কার তখন অদৃশ্য হয়ে যায়, কারণ কে আপনার সাথে কথা বলছে? আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলছেন। আর আল্লাহ কী বলছেন? "তোমাদের প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়েছে।"

আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো বাবার মুখ থেকে প্রশংসা শোনার জন্য আজীবন চেষ্টা করে যাই। বাবা হয়তো কাঁধে হাত রেখে কখনো বলেননি, "বাবা, আমি তোমার জন্য গর্বিত।" কখনো শোনেননি। তিনি হয়তো সবার কাছে বলবেন, "আমার ছেলেটার জন্য আমি খুব গর্বিত।" কিন্তু আপনাকে কখনো বলেছেন? না। কিন্তু ভাবুন তো, আপনার বাবা, আপনার মা, আপনার শিক্ষক, এমনকি আপনার বস, যাকে আপনি পছন্দও করেন না, সেও যদি এসে বলে, "আমি তোমার জন্য গর্বিত, খুব ভালো কাজ করেছো," আপনার ভেতরে একটা অনুভূতি হয়, তাই না? সেদিন দুপুরের খাবারটা একটু বেশিই মজা লাগে, তাই না?

আমার খোদা! আল্লাহ নিজে বলছেন, "আমি তোমার কাজের কদর করি।"

একদিকে আছে জান্নাত, আর অন্যদিকে আছে জান্নাতের চেয়েও উঁচু কিছু। আল্লাহ বলেননি সেটা কী, কিন্তু তিনি বলেছেন এটা এমন কিছু যা সেই গাছটিকে, জান্নাতকে এবং সবকিছুকে ঢেকে ফেলে।

আর শেষ যে আকর্ষণীয় বিষয়টা, আমি জানি সময় হয়ে গেছে, এই ঘটনাটা এখন ঘটেছে না অতীতে? অতীতে। কিন্তু এখানে 'ইয়াগশা' (يَغْشَىٰ) শব্দটি বর্তমান কালের ক্রিয়াপদ… যেন নবী ﷺ এখনও সেই আবরণের অনুভূতি পাচ্ছেন। এটা তাঁর জন্য এক চলমান অনুভূতি।

আর সবচেয়ে রসালো অংশটুকু, কারণ আমাকে ১৭ নম্বর আয়াত থেকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে যখন আমি ফিরে আসব… আল্লাহ এই আয়াতগুলোতে 'ইয়াগশা' (يَغْشَىٰ) শব্দটি বেছে নিয়েছেন। আপনাদের মনে আছে 'সিদরা' (سدرة) সম্পর্কে আমি কী বলেছিলাম? এর একটি অর্থ হলো 'ছায়া ফেলা'। আর 'গাশিয়াহ' (غاشية) শব্দের একটি অর্থও হলো বরই গাছ বা ছায়াদানকারী গাছ। এটা যেন এমন যে, একটি আবরণকে আরেকটি আবরণ ঢেকে ফেলল। সুবহানাল্লাহ! إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ

এটা এক অসাধারণ ভাষা। আমার লক্ষ্য ছিল ১৮ নম্বর আয়াত পর্যন্ত যাওয়ার, কিন্তু আমরা আবার এখানেই ফিরে আসব। আমি শুধু আপনাদেরকে এই আয়াতগুলোতে কী ঘটছে, তার একটা স্বাদ দিতে চেয়েছিলাম।