আমরা এখন একটি শক্তিশালী
আরবি রুট
বা মূল অক্ষর নিয়ে কথা
বলব: س م و (সীন-মীম–ওয়াও)। এই
রুট থেকে
এমন কিছু শব্দ
এসেছে যা
আমাদের ঈমান
এবং চিন্তার
জগতের জন্য
অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
এই রুট থেকে
প্রথম যে
শব্দটি
আমাদের মাথায়
আসে তা হলো سَمَاءٌ (সামা-উন),
যার
বহুবচন سَمٰوٰتٌ (সামাওয়াতুন)। সাধারণভাবে এর
মানে হলো ‘আকাশ‘। কারণ
তা অনেক
উঁচুতে এবং
পৃথিবীকে
ছায়া দিয়ে
রেখেছে।
কিন্তু
আরবির
সৌন্দর্য
দেখুন, এর অর্থ শুধু
আকাশে
সীমাবদ্ধ নয়। ‘সামা‘ মানে হলো
এমন সবকিছু
যা আপনার উপরে
আছে এবং
আপনাকে ছায়া
দিচ্ছে।
এমনকি আপনার
ঘরের ছাদও
আভিধানিকভাবে
একটা ‘সামা‘। রাগিবের
মতো ভাষাবিদরা
বলেছেন, নিচের
কোনো কিছুর তুলনায়
উপরের সবকিছুই
হলো ‘সামা‘
(سَمَاءٌ), আর
উপরের কোনো
কিছুর তুলনায়
নিচের সবকিছুই
হলো ‘আরদ্‘
(اَرْضٌ)।
এমনকি
মেঘ এবং
বৃষ্টিকেও ‘সামা‘ বলা হয়।
সবুজ
গাছপালাকেও ‘সামা‘ বলা হয়, কারণ তা
জমিনের চেয়ে
উঁচু।
এই
একই রুট س
م
و (সীন-মীম–ওয়াও)
থেকে আরেকটি
গুরুত্বপূর্ণ
শব্দ এসেছে: اِسْمٌ (ইসমুন), যার
অর্থ ‘নাম‘। কিন্তু এর
মূল অর্থ আরও
গভীর। ‘ইসম‘ মানে হলো
এমন একটি
চিহ্ন যা দিয়ে
কোনো কিছুকে চেনা যায়।
এর বহুবচন হলো اَسْمَاءٌ (আসমা-উন)।
আর এই রুট থেকেই
এসেছে سَمِیٌّ (সামিয়্যুন) মানে ‘সমনামের‘ বা ‘সমকক্ষ‘। مُسَامَاۃٌ (মুসামাতুন) মানে
পারস্পরিক
সম্মান। سَمَّی
تَسْمِیَۃً (সাম্মা তাসমিয়াতান) মানে নাম
রাখা। আর اَلْمُسَمّٰی (আল-মুসাম্মা) মানে যা
নামকরণ করা
হয়েছে, যা
নির্দিষ্ট বা
পরিচিত।
মুফরাদাত-এ একটি
অসাধারণ কথা
বলা হয়েছে:
مَعْرِفَةُ
الْاَسْمَاءِ
لَاتحْصُلُ
اِلَّا
بِمَعْرِفَةِ
الْمُسَمّٰی (মা‘রিফাতুল আসমা-ই
লা তাহসুলু
ইল্লা বি
মা‘রিফাতিল মুসাম্মা)
অর্থাৎ, "যতক্ষণ
না কোনো
জিনিসের আসল
সত্তা (মুসাম্মা)
সম্পর্কে
জানা যায়,
ততক্ষণ
শুধু তার নাম (ইসম) জেনে
কোনো লাভ
নেই।"
এর
মানে কী? এর মানে
হলো, আল্লাহ আদমকে, অর্থাৎ মানবজাতিকে, শুধু নাম
বলার ক্ষমতা দেননি, বরং
জিনিসকে তার
উপাদান দিয়ে চেনার, তার
বৈশিষ্ট্য
দিয়ে বোঝার
এবং সেই
অনুযায়ী তাকে
একটা নাম
দেওয়ার
ক্ষমতা
দিয়েছেন। এটা
একটা অবিশ্বাস্য
ক্ষমতা!
কুরআনে বহুবার اَرْضٌ وَسَمَاءٌ (আরদুন ওয়া
সামা-উন) একসাথে
এসেছে। হ্যাঁ,
আমাদের
এই পৃথিবীটাকে
‘আরদ্‘
বলা
হয়, কিন্তু
যখন ‘সামা‘-র
বিপরীতে ‘আরদ্‘
আসে,
তখন
এর অর্থ আরও
ব্যাপক হয়ে
যায়। তখন ‘সামা‘
মানে
শুধু আকাশ নয়,
বরং
মহাবিশ্বের
সবকিছু আমাদের
জানা-অজানা গ্যালাক্সি,
তারকা,
সবকিছু। আর ‘আরদ্‘
তখন
শুধু মাটি নয়,
বরং
মানুষের সমাজ,
সভ্যতা,
আমাদের
এই পার্থিব
জীবনকে
বোঝাতে পারে।
তাই যখনই কুরআনে
এই দুটো শব্দ
একসাথে
দেখবেন, আপনাকে
প্রেক্ষাপটটা
বুঝতে হবে। আল্লাহ কি
এখানে
উঁচু-নিচু,
বস্তুগত
জগৎ, নাকি
সামাজিক
মর্যাদা নিয়ে
কথা বলছেন?
আল্লাহ বলেন:
وَعَلَّمَ
آدَمَ
الْاَسْمَاءَ
کُلَّهَا (ওয়া আল্লামা
আদামাল আসমা-আ কুল্লাহা) – "এবং তিনি
আদমকে সকল
বস্তুর নাম
শিক্ষা দিলেন"
(সূরা বাকারা, ২:৩১)।
এখানে
‘আদম‘ মানে শুধু
একজন ব্যক্তি
নন, বরং
পুরো মানবজাতি।
আর ‘নামের
জ্ঞান‘ মানে শুধু তোতাপাখির
মতো নাম
মুখস্থ করা
নয়। এর মানে
হলো, আল্লাহ মানুষকে
এই মহাবিশ্বের
প্রতিটি
জিনিসের
বৈশিষ্ট্য
আবিষ্কার
করার, তার পেছনের
আইন বোঝার এবং
তাকে কাজে লাগানোর
অন্তর্নিহিত
ক্ষমতা
দিয়েছেন। আর একারণেই কুরআন
ঘোষণা করে যে, মহাবিশ্বের সমস্ত
শক্তি
মানুষের
অধীন। এর মানে
হলো, আপনার
আর আমার মধ্যে
এই সম্ভাবনা লুকিয়ে
আছে!
আর এই
জ্ঞান
অর্জনের পর
মানুষের
সামনে দুটো পথ
খোলা থাকে। আল্লাহ
বলছেন:
فَمَنْ
تَبِعَ
هُدَایَ
فَلَاخَوْفٌ
عَلِیْهِمْ
وَلَاهُمْ
یَحْزَنُوْنَ (ফামান তাবি‘আ হুদাইয়া
ফালা খাওফুন
আলাইহিম ওয়ালা হুম
ইয়াহযানুন) – "যে জাতি আমার
এই হেদায়েত
অনুসরণ করবে, (এবং
অর্জিত জ্ঞান মানবকল্যাণে
ব্যবহার করবে)
তাদের কোনো ভয়
থাকবে না, কোনো দুঃখ
থাকবে না" (সূরা
বাকারা, ২:৩৮)।
বিপরীতে,
اُولٰئِکَ
اَصْحٰبُ
النَّارِ
هُمْ
فِیْهَا
خَالِدُوْنَ (উলা-ইকা আসহাবুন
নার, হুম ফিহা খালিদুন) – "আর যে জাতি মহাবিশ্বের
শক্তি আয়ত্ত
করবে কিন্তু
তা মানুষের
কল্যাণে
ব্যবহার করবে
না, তারা
আমার বিধান
অমান্য করার
পরিণাম ভোগ
করবে" (সূরা
বাকারা, ২:৩৯)।
তাহলে
সেই জাতির কী
হবে, যারা
মহাবিশ্বের
শক্তিও আয়ত্ত
করে না, আবার আল্লাহর
বিধানও মানে
না? এক পশ্চিমা
ডাক্তার তার বইয়ের
ভূমিকায় খুব চমৎকার
একটা কথা
লিখেছেন, "আদমকে
জিনিসের
বৈশিষ্ট্য
নির্ধারণের
দায়িত্ব দেওয়া
হয়েছিল।
এটা এক বিশাল
দায়িত্ব, কারণ যে
জিনিসের
বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী
জানা নেই, তা অজানাই
থেকে যায়। আর
যদি কোনো
জিনিসের ভুল বৈশিষ্ট্য
নির্ধারণ করা
হয়, তবে
তার ফলাফল
অত্যন্ত
ক্ষতিকর হতে
পারে।"
এর
মানে হলো, জ্ঞান
অর্জন করা এবং
জিনিসের সঠিক
পরিচয় জানা এটাই
মনুষ্যত্বের
চিহ্ন। আর একারণেই
কুরআন মূর্তিপূজার
সমালোচনা করে
বলে, তোমরা
আল্লাহকে
ছাড়া যাদেরকে
ডাকো, তারা কী? তারা তো
اَسْمَاءٌ
سَمَّیتُمُوْهَا
اَنْتُمْ
وَآبَاؤُ
کُمْ (আসমা-উন সাম্মাইতুমুহা
আনতুম ওয়া আবা-উকুম) – "কিছু নাম
মাত্র, যা তোমরা এবং
তোমাদের
পূর্বপুরুষরা
রেখেছ" (সূরা ইউসুফ, ১২:৪০)।
مَا
اَنْزَلَ
اللّٰهُ
بِهَا
مِنْ
سُلْطَانٍ (মা
আনযালাল্লাহু
বিহা মিন
সুলতান) – "আল্লাহ এর
স্বপক্ষে
কোনো প্রমাণ পাঠাননি" (সূরা ইউসুফ, ১২:৪০)।
ভেবে
দেখুন, আজকের
পৃথিবীতে বড় বড় ধর্মীয়
কাঠামো, বড় বড়
পদ-পদবি, এগুলো কী? এগুলো তো
শুধু নাম।
এগুলো
মানুষের কোনো
আসল সমস্যার
সমাধান করে
না। এগুলো
শুধু কিছু
মানুষকে
অন্যের উপর
প্রভাব
বিস্তারের
সুযোগ করে দেয়।
কুরআনের পথনির্দেশনা
যখন আমাদের
সামনে আসে, তখন তা
ক্ষমতা, ধর্মীয় মর্যাদা
বা সম্পদের
সাথে যুক্ত
সমস্ত চাকচিক্যকে
সরিয়ে দেয় এবং
আমাদের বাস্তবতাকে
দেখতে
সাহায্য করে। আল্লাহর
বিধানই সবকিছুর
সঠিক স্থান
নির্ধারণ করে
দেয়। বাকি সবকিছু, নাম যতই
বড় হোক না কেন, কুরআনের জ্ঞানের
আলোতে তার অন্তঃসারশূন্যতা
প্রকাশ হয়ে
যায়।
📢 গুরুত্বপূর্ণ
ঘোষণা: কুরআনের
আয়াত উচ্চারণ
নিয়ে একটি
অনুরোধ 🕌
আমরা
জানি, কুরআন
হলো আল্লাহর
বানী এটি আরবী
ভাষায় অবতীর্ণ
হয়েছে। অনেক সময়
শিক্ষার্থীদের
বা পাঠকদের সহায়তা
করতে আয়াতের বাংলা
উচ্চারণ দেয়া
হয় যেন তারা প্রাথমিকভাবে
আয়াত পড়তে
শেখে এবং অর্থ
বোঝার দিকে
ধাবিত হয়।
❗ কিন্তু
দয়া করে
লক্ষ্য করুন:
➡️ কুরআনের আয়াত শুধু
বাংলা
উচ্চারণে পড়া কোনোভাবেই
যথাযথ নয়।
➡️ এতে
উচ্চারণ
বিকৃতির
আশঙ্কা থাকে,
অনেক
ক্ষেত্রে
অর্থই
পরিবর্তিত
হয়ে যেতে পারে!
➡️ শুধু
বাংলা
উচ্চারণের
উপর নির্ভর
করলে ইবাদত
হিসেবে তিলাওয়াতের
হক আদায় হয়
না।
✅ তাই
আমাদের
অনুরোধ:
যারা বাংলা
উচ্চারণে
আয়াত পড়ছেন, তারা যেন
দ্রুত সময়ের
মধ্যে সঠিক
আরবী উচ্চারণ
শিখে নেয়।
👉 কুরআন তিলাওয়াতের
সৌন্দর্য ও
অর্থ ঠিক
রাখতে হলে আরবী
উচ্চারণই বাধ্যতামূলক।
🤲 আল্লাহ আমাদের
সবাইকে কুরআনের
সঠিক তিলাওয়াত
শিখে বোঝার তাওফিক
দিন।