এবার আরেকটা খুবই মজার বিষয় দেখুন। আগের আয়াতে আপনারা দেখেছেন, "এমন একজনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন, যে আমাদের স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং সেই একজন দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি।" কতজন মানুষের কথা বলা হচ্ছিল? একজন। কিন্তু এখন আপনি দেখছেন, ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُمْ (যালিকা মাবলাগুহুম) — "এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়।"
আমরা একজন থেকে হঠাৎ করে অনেক মানুষের কথায় চলে গেলাম। এটাকে আরবিতে বলা হয় الْتِفَات (ইলতিফাত), অর্থাৎ মোড় নেওয়া বা পরিবর্তন। এখানে হঠাৎ করেই একজন থেকে অনেকের দিকে মোড় নেওয়া হয়েছে। এর কারণটা কী?
কারণ হলো, আল্লাহ এখানে ব্যক্তিগত আবেগ এবং সামাজিক প্রবণতার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করছেন। একজন ব্যক্তি হিসেবে, একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে আপনার নিজের চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ আছে। কিন্তু আপনি হয়তো বুঝতেও পারেন না যে আপনার কতগুলো চিন্তা বা অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত বা সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে সেই সমাজের প্রচলিত ধারা বা প্রভাবশালী আলোচনার দ্বারা, যেখানে আপনি বাস করছেন। তাই ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُمْ (এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়)—গোটা সংস্কৃতিটাই যেন জ্ঞানের দৌড় কতটুকু হবে, তার ওপর একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
যেমন ধরুন, বিশ্ববিদ্যালয়। আমি বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে চিনি, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগগুলোতে, মুসলিম নারীরা যারা মাইক্রোবায়োলজি বা নিউরোলজি বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করছেন এবং হিজাব পরেন, তাদের নিয়ে প্রচুর ঠাট্টা-মশকরা করা হয়। কেন? কারণ তাদের মধ্যে স্পষ্টতই একটি বিশ্বাস আছে। আর এখন অ্যাকাডেমিয়ায় একটা ধারা হলো, বিশেষ করে আপনি যদি বিজ্ঞানের ছাত্র হন, তাহলে বিশ্বাস আর বিজ্ঞান একসাথে চলতে পারে না—ওরা এটা ঠিক করে ফেলেছে। তাই তাদের সবসময় সমালোচনা, উপহাস, বিদ্রূপ করা হয়, কারণ তারা বিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বাসী। "তুমি যদি বিশ্বাসী হও, তাহলে কীভাবে একজন সত্যিকারের বিজ্ঞানী হতে পারো?"
তাহলে তারা কী করেছে? তারা একটা সংস্কৃতি হিসেবে, অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে যে তুমি কী হতে পারবে আর কী হতে পারবে না, তুমি কী নিয়ে ভাবতে পারবে আর কী নিয়ে ভাবতে পারবে না।
ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ
(এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়।)
বিদ্রূপের বিষয় হলো, এরাই আবার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কথা বলে। এটাই এই সবকিছুর হাস্যকর ভণ্ডামি। তারা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত মত প্রকাশের কথা বলে। "এটা আমার সত্য," কিন্তু আপনার সত্যটা সত্য নয়। বাকি সবারটা ঠিক আছে। আপনি একটা মুরগি বা একটা স্কান্ক (গন্ধগোকুল) হতে চান? ঠিক আছে। আপনি মুসলিম হতে চান? "ওটা নিয়ে একটু ভাবতে হবে। ওটা তো বর্বরতা।"
যেন, যে ব্যক্তি নিজেকে শেয়াল মনে করে, সে একজন মুসলমানের চেয়েও বেশি মানুষ, কারণ মুসলমানরা ইসলামে বিশ্বাস করে। এটা নাকি বড্ড বেশি বর্বর।
ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ
(এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়।)
শুধু ব্যক্তিরাই নিজেদের ওপর সীমা আরোপ করে না। সংস্কৃতি এবং সমাজও এমন সীমা আরোপ করতে শুরু করে, যা কেবল একটামাত্র জিনিসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
لَمْ يُرِدْ إِلَّا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
(সে দুনিয়ার জীবন ছাড়া আর কিছুই চায়নি।)
আর এটা শুধু একটা দার্শনিক আলোচনা নয়। এর বাস্তব জীবনেও প্রয়োগ আছে। আমি এমন ডাক্তারদের সাথে দেখা করেছি, যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল ব্যবস্থার দুর্নীতি দেখতে পান। আর যদি তারা এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে তাদের চাকরি চলে যাবে। তারা দেশের কোথাও আর ডাক্তারি করতে পারবে না।
যদি তারা বলে যে ভুল ঔষধ দেওয়া হচ্ছে, বা ভুল রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে, বা এই এই দুর্নীতি করা হচ্ছে, রোগীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে—আর এসব তাদের চোখের সামনেই ঘটছে। আর এরা এমন মুসলিম, যারা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে। তারা সঠিক কাজটি করতে চায়, কিন্তু তাদের সুপারভাইজার বলে, "চাকরিটা চাও, নাকি না? কারণ আমি যদি তোমার ক্যারিয়ার শেষ করে দেই, আমি নিশ্চিত করব তুমি আর কোথাও কাজ পাবে না।"
এই ব্যক্তি, যদিও তার নিজের কোনো খারাপ আকাঙ্ক্ষা নেই, কিন্তু কে তার উপর সীমা আরোপ করছে? সংস্কৃতি।
ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ
(এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়।)
জ্ঞানের মধ্য থেকেই সংস্কৃতি জ্ঞানের ওপর একটা সীমা আরোপ করে দেয়।
الاحتمال الثاني: جُمِعَ بِاعْتِبَارِ مَعْنَاهُ كَمَا أَنَّ إِفْرَادَهُ قَبْلُ بِاعْتِبَارِ لَفْظِهِ
(দ্বিতীয় সম্ভাবনা: এর অর্থকে বিবেচনা করে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন আগে এর শব্দকে বিবেচনা করে একবচন ব্যবহার করা হয়েছিল।)
অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন—এখানেই তাফসির সাহিত্যের কিছু ব্যাখ্যার সাথে আমি পুরোপুরি একমত নই। কিন্তু যাই হোক, স্বচ্ছতার খাতিরে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি—তাঁরা বলেন যে مَنْ (মান) শব্দটি একবচন এবং বহুবচন উভয়ের জন্যই ব্যবহার হতে পারে। হ্যাঁ, দুটোই সম্ভব। কিন্তু তারপরেও কেন একটা থেকে আরেকটাতে পরিবর্তন করা হলো? এটাই হলো দ্বিতীয় সম্ভাব্য ব্যাখ্যা।
আরেকটি মজার বিষয় হলো, এখানে مَنْ (মান) শব্দটি ব্যবহার করে আল্লাহ একটি সাধারণীকরণ করেছেন। আমি খুব বেশি আরবি না পড়ে ব্যাখ্যা করছি। আল্লাহ যখন এই মানুষগুলোর কথা বলছিলেন, আপনারা খেয়াল করবেন আমি শেষবার বলেছিলাম যে আল্লাহ মক্কার সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদদের কথা বলছিলেন, যারা সমাজের বাকিদের কাছে ধারণা বিক্রি করত। এই চিন্তাবিদরা হলো সেই সমাজের তারকা বা প্রভাবশালী ব্যক্তি। সবাই তাদের চেনে। তারা নেতা। তাদের সাথে একটা "The" বা "সেই" যুক্ত থাকে। তারা যে কেউ নয়। তারা হলো সেই বিশেষ ব্যক্তি।
যদি আয়াতে তাদেরকেই বোঝানো হতো, তাহলে আগের আয়াতে আপনি مَنْ (মান) দেখতেন না। আপনি দেখতেন, فَأَعْرِضْ عَنِ الَّذِي تَوَلَّىٰ (ফা'আরিদ 'আনিল্লাযি তাওয়াল্লা) — الَّذِي (আল্লাযি) দিয়ে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝানো হতো। কিন্তু আল্লাহ বলছেন, "তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যে কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয়।" যেন তারা শুধুই مَنْ (মান), مبهم (মুবহাম) বা অস্পষ্ট। তারা এতটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। আল্লাহ তাদের এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যেন তারা নির্দিষ্ট করে বলার যোগ্যই নয়।
আর এটাই তাদের সবচেয়ে অপছন্দের একটা জিনিস। কারণ দুনিয়ার জীবনের একটা বড় আকাঙ্ক্ষা হলো পরিচিতি পাওয়া, স্বীকৃতি পাওয়া। আপনি নেতা হওয়ার জন্য এত কঠোর পরিশ্রম করেন। আপনি কোটিপতি হওয়ার জন্য এত পরিশ্রম করেন। আপনি বিখ্যাত হওয়ার জন্য এত পরিশ্রম করেন, আর তারপর কেউ এসে বলবে, "আমি আপনাকে চিনি না?"
আজকে খুতবার পর একজন আমার কাছে এসেছিলেন। আমার ভালো লেগেছে। তিনি বললেন, "আপনার খুতবা ভালো লেগেছে। আমি আপনাকে চিনি না, কিন্তু ভালো লেগেছে।" আর আমি মনে মনে বললাম, "আপনাকেও আমার ভালো লেগেছে।" তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলাম, বললেন, "ইমরান।" আমি বললাম, "বেশ, এখন আমি আপনার নাম জানি।"
কিন্তু এই যে পরিচিতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহ তাদের থেকে এটা কেড়ে নিয়েছেন। আল্লাহ নবী ﷺ-কে বলেছেন, "তাদের উপেক্ষা করুন," তাই না? কিন্তু مَنْ (মান) শব্দটি ব্যবহার করে আল্লাহ নিজেও তাদের উপেক্ষা করেছেন। তিনি যেন নিজে উদাহরণ দিয়ে শুরু করেছেন। তাই তিনি বলেছেন مَنْ (মান)।
ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ
(এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়।)
তারা সবাই একই রকম। তারা কোনো বিশেষ ব্যক্তি নয়।
আরেকটা বিষয় যা আমি এখানে লিখেছি, তা হলো—ভেতরের জ্ঞান বনাম বাইরের জ্ঞান। আয়াতটা খেয়াল করুন। গতকাল আমরা পড়েছিলাম, "তাদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞানই নেই।" মনে আছে? مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ (তাদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই)। কিন্তু এখন তিনি অন্য কথা বলছেন। তিনি বলছেন, "এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়।"
দুটোকে দুটো ভিন্ন কথা মনে হচ্ছে। কারণ যদি আপনি বলেন, "এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়," তার মানে তাদের কিছু জ্ঞান আছে, শুধু সেটা সীমিত। সুতরাং আজকের আয়াতটি সীমিত জ্ঞান নিয়ে, আর আগের আয়াতটি ছিল কোনো জ্ঞান না থাকা নিয়ে। পার্থক্যটা দেখতে পাচ্ছেন?
এখন আমরা একটি মজার বিষয় দেখব। কুরআন এমন সমীকরণ তৈরি করে যা আপনি গণিতে খুঁজে পাবেন না, সাহিত্যেও খুঁজে পাবেন না। আপনি কেবল কুরআনেই তা খুঁজে পাবেন। আল্লাহ এখানে সীমিত জ্ঞানকে কোনো জ্ঞান না থাকার সমান করে দেখাচ্ছেন।
এই সমস্যাটা বোঝানোর জন্য আমি একটা সাধারণ উদাহরণ দিচ্ছি। আমার বাবা, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাঁকে অনেক সুস্থতা দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে তাঁর কোয়াড্রপল বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। তিনি ডাক্তারকে ভীষণ ভয় পেতেন। যখন তাঁর দুর্বলতার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করল, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছিল, তখন তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার বললেন, একজন কার্ডিওলজিস্ট দেখানো উচিত। কার্ডিওলজিস্টের কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, "আপনার ৮০% ব্লক। এখনই কিছু করতে হবে।" আর বাবা বললেন, "না, আমি শুধু কলা খাবো।"
যাইহোক, এটা সবচেয়ে পাকিস্তানি একটা ব্যাপার। যদি না জেনে থাকেন, কলা খেলে সব রোগ সেরে যায়। "আমি শুধু কলা খাবো, আর সব ঠিক হয়ে যাবে।" ডাক্তার বললেন, "না, আপনি কলা খেতে পারেন, কিন্তু আপনার সার্জারিও করাতে হবে।"
সমস্যাটা হলো, আমার বাবার কিছু জ্ঞান আছে। কলা স্বাস্থ্যকর, এটা দারুণ। তিনি কম চর্বিযুক্ত, কম তৈলাক্ত খাবার খাবেন, ভালো কথা। তাঁর কিছু জ্ঞান আছে, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেই কিছু জ্ঞান কিসের সমান? কোনো জ্ঞানেরই সমান নয়।
আমি এই সাধারণ উদাহরণটা দিলাম কারণ আল্লাহ আমাদের দৃশ্যমান জগতের জ্ঞান দিয়েছেন এবং এই দৃশ্যমান জগতের সাথে অদৃশ্য জগৎও জড়িত। শুরুটা আমাদের নিজেদের থেকেই। আমার একটা অংশ দৃশ্যমান, আরেকটা অংশ অদৃশ্য। আমার ভেতরে একটা রূহ আছে। আমরা দৃশ্যমান চোখ আর অদৃশ্য চোখ, দৃশ্যমান কান আর অদৃশ্য কান, দৃশ্যমান অন্তর আর অদৃশ্য অন্তরের কথা বলেছিলাম। মনে আছে?
আংশিক জ্ঞান অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গুরুতর ক্ষেত্রে, কিসের সমান? কোনো জ্ঞানেরই সমান নয়। একটা আদালতের মামলায়, যেহেতু এটা একটা গুরুতর বিষয়, কেউ যদি আংশিক প্রমাণ পেশ করে, যা শেষ পর্যন্ত কিসের সমান হয়? কোনো প্রমাণেরই সমান নয়। আংশিক প্রমাণ মানে কোনো প্রমাণ নয়। যদি একটি গবেষণাপত্র আংশিক ফলাফল দেয়, তাহলে কার্যত তা কিসের সমান? কোনো ফলাফলেরই সমান নয়।
সুতরাং কুরআন এখানে একটি চিন্তার প্রক্রিয়া তৈরি করছে। আপনি আংশিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে কোনো বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারেন না। আপনি আংশিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বাস্তবতায় পৌঁছাতে পারবেন না। তাই তিনি তাদের সম্পর্কে বলছেন, "এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়," এবং ব্যাখ্যা করছেন, হ্যাঁ, তারা কিছু জিনিস জানে, কিন্তু সেই জানা জিনিসগুলো আংশিক হওয়ার কারণে, তা শূন্যের সমান।
সুতরাং প্রথম বক্তব্যটি, مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ (তাদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই), আসলে সত্য। আর এখন তা আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কুরআন এভাবেই নিজেকে ব্যাখ্যা করে।
তিনি বলেন, إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن… (নিশ্চয় আপনার রবই অধিক জানেন কে…)
এই বিষয়ে আরেকটি আয়াত আছে। তিনি বলেন,
يَعْلَمُونَ ظَاهِرًا مِّنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
"তারা দুনিয়ার জীবনের প্রকাশ্য দিক সম্পর্কে জানে।"
(সূরা আর-রূম, আয়াত: ৭)
وَهُمْ عَنِ الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُونَ
"আর তারা আখিরাত সম্পর্কে উদাসীন।"
(সূরা আর-রূম, আয়াত: ৭)
আর জিনিসপত্রের ভেতরের বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু প্রকাশ্য দিকটা জানে। আর এখানেও তিনি সেটাই বলছেন, ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ (এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়)।
এখানে الْعِلْمِ (আল-ইলম) শব্দটির তাৎপর্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা তো আছেই, কিন্তু 'জ্ঞান' শব্দটির সাথে 'আল' যুক্ত আছে। এখানে এটাকে বলা হয় 'লাম আল-ইসতিগরাক'। এর মানে হলো, পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান সেটাই যা দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য উভয়কেই বিবেচনায় নেয়। অন্যথায়, এটা কোনো জ্ঞানই নয়।
জানেন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, আমরা গবেষণার ওপর ভিত্তি করে একে 'অগ্রগতি' বলি। অগ্রগতির মানে হলো আপনি সামনে এগোচ্ছেন, ওপরে উঠছেন, তাই না? আচ্ছা, পারমাণবিক বোমা একটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ছিল। কিন্তু এটা কি মানবতাকে পিছিয়ে দিয়েছিল? দিয়েছিল, তাই না? রাসায়নিক অস্ত্র একটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি। কিন্তু এটা কি মানবতাকে পিছিয়ে দেয়? দেয়।
বিজ্ঞান আপনাকে নতুন আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। কিন্তু বিজ্ঞান শুধু বাইরের জ্ঞান। আল্লাহর ওপর ঈমান, ওহীর ওপর ঈমান হলো ভেতরের জ্ঞান। যদি একজন বিজ্ঞানীর ঈমান থাকে, সে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করবে না। যদি একজন বিজ্ঞানীর ঈমান থাকে, সে এমন কিছু তৈরি করতে পারে না যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পৃথিবীকে দূষিত করবে, যেমন পারমাণবিক বোমা। সে এটা করবে না। সে এটা করতে পারে না।
বৈজ্ঞানিক মন, বিজ্ঞান নিরপেক্ষ। আপনি যেকোনো দিকে বিজ্ঞানের গবেষণা করতে পারেন। বিজ্ঞান অন্ধ। যেকোনো কিছু অন্বেষণ করুন, আর আপনি তা আবিষ্কার করতে পারবেন। ঈমান কী করে? এটি একে একটি পথে রাখে, الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (আস-সিরাত আল-মুস্তাকিম – সরল পথ)। এটি একে একটি দিকনির্দেশনা দেয়। আর তখন বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি দিকনির্দেশনা থাকে।
ব্যবসা, আপনি যেকোনো ব্যবসা করতে পারেন। ঈমান কী করে? আপনার ব্যবসাকে একটি দিকনির্দেশনা দেয়। আর সেটাই সত্যিকারের জ্ঞান। সত্যিকারের জ্ঞান হলো, ঠিক আছে, আপনার ব্যবসার জ্ঞান আছে, চিকিৎসার জ্ঞান আছে, বিজ্ঞানের জ্ঞান আছে, রাজনীতির জ্ঞান আছে। আপনার এই সব জ্ঞান আছে, কিন্তু এটা আংশিক জ্ঞান। সত্যিকারের জ্ঞান তখনই হবে যখন দুনিয়াবী জ্ঞান আধ্যাত্মিক জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত হবে। তখনই তা الْعِلْم (আল-ইলম) বা পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানে পরিণত হয়। তাদের কাছে الْعِلْم-এর একটি অংশ আছে, পুরোটা নেই। বুঝতে পারছেন? এটা একটা অত্যন্ত শক্তিশালী, গভীর দার্শনিক বক্তব্য যা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰ
"নিশ্চয় আপনার রবই অধিক জানেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই অধিক জানেন কে হিদায়াতপ্রাপ্ত।"
(সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩০)
নিঃসন্দেহে, তিনিই আপনার রব। তিনিই আসলে ভালোভাবে জানেন কে তাঁর পথ থেকে হারিয়ে গেছে এবং কে সত্যিই হিদায়াতের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জানেন কে পথভ্রষ্ট এবং তিনি জানেন কে হিদায়াতপ্রাপ্ত।
প্রথমে, একটা ব্যক্তিগত মন্তব্য করি, কারণ আমি এটা নিয়ে অনেক কথা বলি। অন্তত একবার বলে নিলে আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে যাবে। মুসলমানরা কে হিদায়াতপ্রাপ্ত আর কে নয়, তা নির্ধারণ করার জন্য পাগল হয়ে থাকে। আর যখন আমরা সমগ্র মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট ঘোষণা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই, তখন আমরা ভাবি, "আমি আর কাকে কাফির ঘোষণা করতে পারি?" তখন তারা তাদের মুসলিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, "এই, তোমাকে তো একটু পথভ্রষ্ট মনে হচ্ছে। তুমি কী কী বিশ্বাস করো, সব আমাকে বলো।"
তারপর আমি একটা ভিডিও বানাবো তুমি কত বড় কাফির, তা নিয়ে। তারপর আরেকটা ভিডিও বানাবো তুমি কত পথভ্রষ্ট। আমরা এটা ঘোষণা করতে থাকব কে হিদায়াতপ্রাপ্ত আর কে পথভ্রষ্ট।
আমি মনে করি না ভুল ধারণার সমালোচনা করায় কোনো ভুল আছে। যেমন, কারো যদি ভুল ধারণা থাকে, আপনি তার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আমরা তা করি না। আমরা ধারণার সমালোচনা করি না। আমরা মানুষের সমালোচনা করি। এই দুটো জিনিসের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। এমন আলেম আছেন যাদের সাথে আমি কথা বলি, যাদের থেকে আমি শিখি, কিন্তু আমি তাদের সাথে তীব্রভাবে দ্বিমত পোষণ করি। এবং আমি মনে করি কোনো একটি বিষয়ে তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এটা আমি মনে করি। আর আমি তাদের মুখের ওপরই তা বলি।
কিন্তু জানেন কী? আমি কখনোই তাদের পথভ্রষ্ট বা কাফির মনে করি না। আমি শুধু জানি, আমার জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তর থেকে, এটাই আমার কাছে বেশি যৌক্তিক মনে হয়। অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট ঘোষণা করার সাহস আমার নেই। কারণ পথভ্রষ্টতা শুধু এখানে (মাথায়) থাকে না। হিদায়াত এবং পথভ্রষ্টতা এখানেও (অন্তরে) থাকে। আর আমার এখানে কোনো প্রবেশাধিকার নেই। আমার কাছে তাদের লেখা বই আছে, তাদের লেকচার আছে, তাদের ধারণা আছে। আমি বলতে পারি, এই ধারণাটা একটু ভুল। এই যুক্তিটা কিছুটা দুর্বল। ঠিক আছে, আমি এটা করতে পারি।
কিন্তু সেটাও আমার কাজ নয় যে আমি ইউটিউবে আপনাদের জন্য দিয়ে দেবো আর আপনারা বলবেন, "ওহ, ইনি ওনার সম্পর্কে এই ভাবেন।" আপনারা কী পছন্দ করেন জানেন? আপনারা কেউ কেউ UFC পছন্দ করেন। এখন আমাদের ইসলামিক UFC শুরু হয়েছে। এ ওনাকে নিয়ে বলছে, ও এনাকে নিয়ে বলছে… আর আপনারা লেকচারের পর এসে বলেন, "উস্তাদ নুমান, এই ব্যক্তির সম্পর্কে আপনার মতামত কী? ওনার ব্যাপারে আপনার কী মত? আপনাকে একটা ভিডিও পাঠাই, আপনার মতামত দিন।"
আমার মতামত দিয়ে আপনি কী করবেন? আমার মতামত দিয়ে কি সালাদ বানাবেন? কী করবেন? আমার মতামত দিয়ে কি আপনি ভালো মানুষ হয়ে যাবেন? আপনার ইসলাম… আমার মতামত দিয়ে কি আপনি আল্লাহর কাছাকাছি চলে যাবেন? আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো কি আমার মতামতের কারণে উধাও হয়ে যাবে? আর অমুক ব্যক্তির ওপর আমার মতামত? আপনি এটা কেন চান? কারণ আপনারা মুসলমানদের অন্তর্দ্বন্দ্বের বিনোদন পছন্দ করেন। এই সবকিছুই হলো একটা মনস্তাত্ত্বিক রোগ, কে হিদায়াতপ্রাপ্ত আর কে নয়, তা ঘোষণা করার।
আল্লাহ তাঁর নবী ﷺ-কে বলছেন, তিনি তাঁর রাসূল ﷺ-কে বলছেন, "আপনার রবই সেইজন যিনি আসলে ভালোভাবে জানেন কার হিদায়াত আছে, কে পথভ্রষ্ট, আর কে সত্যিই হিদায়াতপ্রাপ্ত।" কারণ যে ব্যক্তি এখন আপনার সামনে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেমন খালিদ ইবন ওয়ালিদ, সে হয়তো ভবিষ্যতে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। হয়তো একজন হামজা আছেন যিনি এখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি কিন্তু পরে সাহাবী হবেন। আপনি এখনো জানেন না। একজন আবু সুফিয়ান আছেন যিনি আপনার বিরুদ্ধে একাধিকবার যুদ্ধক্ষেত্রে থাকবেন কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর বিশ্বাসীদের সাথে সালাতে সিজদা করবেন। এখন মক্কায় এমন অনেক লোক আছে যারা আপনাকে ঘৃণা করে, কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর এরাই আপনার সাথে হজ করবে।
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰ
"নিশ্চয় আপনার রবই অধিক জানেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই অধিক জানেন কে হিদায়াতপ্রাপ্ত।"
(সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩০)
তিনি জানেন। আমরা ধারণার বিচার করতে পারি। সুতরাং এই আয়াতের মধ্যে একটা খুব সুন্দর বিভাজন ঘটেছে। আমরা তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বিচার করতে পারি, কিন্তু আমরা তাদের বিচার করতে পারি না। দেখতে পাচ্ছেন? আয়াতের প্রথম অংশ, ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ (এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়), হলো তাদের ধারণার সমালোচনা। কিন্তু আয়াতের বাকি অংশটা হলো—আপনি তাদের ধারণার সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু তারা আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, সেই বিচার আপনি করতে পারেন না। ওটা আমার (আল্লাহর) কাজ। ওটা আপনার জন্য নয়। এজন্যই দুটোকে একই আয়াতে রাখা হয়েছে।
কারণ আমাদের ক্ষেত্রে কী হয়? যখনই আমরা কারো ধারণার সমালোচনা করি, তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে এখন আমরা সেই ব্যক্তির ওপরও বিচার করার জন্য প্রস্তুত। তাই তিনি এই বিভাজনটা করে দিয়েছেন। এই রেখাটি আল্লাহ টেনে দিয়েছেন, বন্ধুরা। যদি না আপনি আয়াতটাকেই কেটে ফেলতে চান। الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ (যারা কুরআনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে)। যদি না আপনার সেসবে আগ্রহ থাকে।
আমি এখানে "পথভ্রষ্ট" শব্দটি রেখেছি কারণ সূরার শুরুতে مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَىٰ (তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি) অংশে আমি ضَلَّ (দল্লা) এর কয়েকটি অর্থ দিয়েছিলাম।কিন্তু আমি "পথভ্রষ্ট" এর দ্বিতীয় অর্থগুলো আবার ব্যাখ্যা করছি।
একটি ছিল, যখন দুটো জিনিসকে এক মনে হয়। কেন আমি এটা বলছি জানেন? কারণ এখন অনেকের কাছে ضلال (দালাল) বা পথভ্রষ্টতা হলো—তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সব ধর্মকে একটি সাংস্কৃতিক-নৃতাত্ত্বিক ঘটনা হিসেবে দেখে। "আরবীয় সংস্কৃতি ইসলাম তৈরি করেছে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল খ্রিষ্টধর্ম ও ইহুদিধর্ম তৈরি করেছে, আর পূর্ব ও এশীয় অঞ্চল থেকে এসেছে হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ইত্যাদি। এই সব ধর্মই সাংস্কৃতিক-নৃতাত্ত্বিক ঘটনা।" তাই তারা বৌদ্ধধর্মকে যেভাবে গবেষণা করে, ইসলামকেও সেভাবে করে, খ্রিষ্টধর্মকেও সেভাবে করে—শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে। অ্যাকাডেমিকরা এটাই করে। জানেন এটা কী? যখন দুটো জিনিসকে এক হিসেবে দেখা হয়। সঠিক এবং ভুল জিনিসকে এমনভাবে গুলিয়ে ফেলা হয় যেন তারা একই। আর এটাই ضلال (দালাল) এর একটি অর্থ।
আরেকটি অর্থ হলো "নষ্ট হওয়া"। আর এটা সত্যি। এই লোকগুলো, যাদের দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞান আছে, তাদের বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হচ্ছে কারণ তারা এখানে (অন্তরে) কী ঘটছে তা নিয়ে ভাবতে চায় না। আমি ইতালিতে এক মেধাবী ভাষাবিদের সাথে দেখা করেছিলাম, আগস্ট থেকে আমি যে ৩২টি শহরে গিয়েছিলাম তার মধ্যে রোমে ছিলাম। আর আমি পালেরমোতেও ছিলাম। পালেরমোতে প্রাচ্যবিদদের একটি কুরআন সম্মেলন ছিল। তো, বেশিরভাগই অমুসলিম অ্যাকাডেমিক এবং কিছু মুসলিমও সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। আমি আরবি ভাষার একজন মেধাবী ব্যাকরণবিদ ও ভাষাবিদের সাথে দেখা করি। আমি তাঁর নাম বলব না। অমুসলিম। কুরআন ভালোবাসেন। কুরআনের ওপর পিএইচডি করেছেন কারণ তাঁর কাছে এটা সাহিত্য। আর যখন আপনি তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন, "আপনি কি কখনো এটা নিয়ে ভেবেছেন যে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কি না?" তিনি বলেন, "ওটা আমার চিন্তার বিষয় নয়। আমার চিন্তা হলো এর ব্যাকরণ নিয়ে।"
ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُم مِّنَ الْعِلْمِ… إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ
(এটাই তাদের জ্ঞানের দৌড়… নিশ্চয় আপনার রবই অধিক জানেন কে পথভ্রষ্ট হয়েছে।)
নষ্ট হয়ে গেল! এত কাছে এসেও… কোটি কোটি মুসলিম আছে যারা আপনার জানা আরবির দশ ভাগের এক ভাগ শেখার জন্য জীবন দিয়ে দেবে, ভাই। তারা এটা জানার জন্য মরে যাবে। আর আপনার কাছে এটা আছে। কী অপচয়! আপনার তো চাইনিজ বা অন্য কিছু শেখা উচিত ছিল। জানি না।
তারপর, "ধ্বংস করা"। ضل (দল্লা) শব্দের অর্থ ধ্বংসও হয়। যেমন أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ (তিনি কি তাদের চক্রান্তকে ধ্বংস করে দেননি?)। ضلال (দালাল) মানে ধ্বংসও হয়। আল্লাহ জানেন কে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
কিন্তু ضلال (দালাল) এর আরেকটা অর্থ হলো, এমন ব্যক্তি যে সহজেই কারো কথায় প্রভাবিত হয়। তারা যেকোনো কিছু অনুসরণ করে। আল্লাহ এমন লোকদের জানেন যারা সহজেই প্রভাবিত হয়ে তাঁর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মজার বিষয় হলো, এখানে "তাঁর পথ" শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ পথ একটি দিকনির্দেশনার প্রতীক। আর ضلال (দালাল) দিকনির্দেশনার অভাবের প্রতীক। আল্লাহ বলছেন, তিনি দিকনির্দেশনা দেন। আল্লাহ এমন লোকদের জানেন যারা সেই দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে চায় না।
وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰ
(এবং তিনিই অধিক জানেন কে হিদায়াতপ্রাপ্ত।)
এবং তিনিই ভালোভাবে জানেন কে সত্যিই হিদায়াতপ্রাপ্ত আর কে নয়। বিচার করা এবং না করার বিষয়ে এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। আমি বর্তমানের "woke culture"-এর ভণ্ডামিটা তুলে ধরতে চাই। "কাউকে বিচার করো না, ভাই।" আরে, তুমি তো আমাকেই বিচার করলে এই ধারণাটা বিচার করার জন্য। "কারো কথা শুনো না।" তাহলে আমি এখন তোমার কথা কেন শুনছি? তুমি আমাকে বলছ কারো কথা না শুনতে, আর তুমিই বলছ, "আমাকে শোনার জন্য ধন্যবাদ বন্ধুরা। নিশ্চিত করবে যেন কারো কথা না শোনো।"
এই নতুন পাওয়া স্বাধীনতার মধ্যে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আমরা জানি না এটা দিয়ে কী করব। আমরা সব ধরনের উদ্ভট দিকে ছুটে চলেছি। আর আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন بِمَنِ اهْتَدَىٰ (যে হিদায়াতের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ)।
পথ এবং হিদায়াতকে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে সমান করা হয়েছে। কারণ হিদায়াত একটি জিনিস নয়। হিদায়াত একটি যাত্রা। কেউ হয়তো হিদায়াতের পথে আছে। সে এখন খ্রিষ্টান, কুরআন পড়ছে, কিছু জিনিস শিখছে। সে আসলে ইতিমধ্যেই হিদায়াতের পথে আছে, যদিও সে প্রতি রবিবার চার্চে যাচ্ছে। সে এখনো হিদায়াতের পথে আছে।
কেউ হয়তো মাত্র মুসলিম হয়েছে। সে নামায পড়া শুরু করছে, শিখছে। এখনো পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকমতো পড়তে কষ্ট হচ্ছে। তার জন্য একটা প্রক্রিয়া আছে। সে হিদায়াতের পথে আছে। এটা তার জন্য একটা যাত্রা। সে পৌঁছে যাবে।
আল্লাহ যারা শাহাদা গ্রহণ করেছিল, তাদের ওপর সাথে সাথেই দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায فرض করেননি। এমনকি সাহাবাদের ওপরও। তিনি পারতেন। এমন হতে পারত, শাহাদা নেওয়ার মুহূর্তেই খাবার, মদ, নামায—সব নিষেধাজ্ঞা প্রথম দিনেই চলে আসত। যেমনটা আমরা করি যখন কেউ মুসলিম হয়, তাই না? আস্তে আস্তে এগোতে দিন। তাদের বেড়ে উঠতে দিন। এটা একটা যাত্রা।
আল্লাহ জানেন কে বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হতে পারে যে ব্যক্তি তার নামায নিয়ে সংগ্রাম করছে, সে এই যাত্রায় আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশি হিদায়াতপ্রাপ্ত, যে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ছে আর অন্যদের নিয়ে বিচার করছে। কারণ যখন সে অন্যদের ওপর বিচার করে, তখন সে একটা কুফরি কাজ করে, কারণ বিচার করার অধিকার কেবল আল্লাহর।
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰ
"নিশ্চয় আপনার রবই অধিক জানেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই অধিক জানেন কে হিদায়াতপ্রাপ্ত।"
(সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩০)
ইবনে আশুর বলেন, আল্লাহ কেন বলেছেন, "নিশ্চয়ই আপনার রব জানেন… তিনিই একমাত্র রব যিনি জানেন…"? তিনি তো নবীর সাথে কথা বলছেন। নবী তো সন্দেহপ্রবণ শ্রোতা নন। মনে রাখবেন, জোর দিয়ে তখন কথা বলা হয় যখন শ্রোতা সন্দেহপ্রবণ হয়। আর এখানে দ্বিগুণ জোর দেওয়া হয়েছে, যেন শ্রোতা প্রত্যাখ্যানকারী। অথচ এখানে নবীর সাথে কথা বলা হচ্ছে। তাহলে আল্লাহ কেন তাঁর নবীর সাথে এভাবে কথা বলবেন?
কখনো কখনো আপনি একজনের সাথে কথা বলেন, কিন্তু আসলে আপনি অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে কথা বলেন। যেমন, আমি যদি আপনাকে বলি, "এই ভলান্টিয়ারগুলো এত অলস।" আমি আপনার সাথে কথা বলছি, কিন্তু আসলে আমি… ভলান্টিয়ারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি। কিন্তু মূল কথা হলো, আমি যদি এমনটা করি, আমি আপনার সাথে কথা বলছি, কিন্তু আসলে তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি। আর বিষয়টা হলো, তারা আমার সময় দেওয়ার যোগ্য নয় যে আমি সরাসরি তাদের সাথে কথা বলব।
সুতরাং এই কথাগুলোতে আল্লাহর একটি ক্রোধ আছে, কিন্তু তা নবীর প্রতি নির্দেশিত নয়, যদিও তিনি নবী ﷺ-এর প্রতি তাঁর স্বর উঁচু করছেন। আপনাদের মধ্যে যারা বিবাহিত, তারা এটা জানেন। কখনো কখনো আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনাকে খুব রেগে ফোন করে, আপনার ওপর নয়, অন্য কারো ওপর। "আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না ওরা এমনটা করছে!" আর আপনি তাদের এতদিন ধরে চেনেন যে আপনি জানেন, তারা আমার ওপর রাগ করেনি, তারা তাদের চাচার ওপর বা বসের ওপর রেগে আছে। তারা আপনার ওপর ঘুষি মারছে না। সম্পর্কের প্রথম দিকে আপনি হয়তো ভাবেন, "আমি কেন এটা শুনছি? আমার প্রতি এত শত্রুতা কেন?" পরে আপনি বোঝেন, "ওকে, আমি হলাম সাউন্ডিং বোর্ড, আর আমার বলার কথা, 'হ্যাঁ, হ্যাঁ, ধরো ওদেরকে'।" এটাই আমার ভূমিকা ছিল। তো, এটা একরকম… ইবনে আশুরের ব্যাখ্যাটা আমি এভাবেই বোঝালাম।