أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
(আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।)
أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي
(হে আমার রব, আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজকে সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।)
فَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَىٰ رَسُولِ اللَّهِ وَعَلَىٰ آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِينَ، أَمَّا بَعْدُ…
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং আল্লাহর রাসূল, তাঁর পরিবার ও তাঁর সকল সাহাবীর উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক। অতঃপর…)
সবাইকে আবারও, السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
(আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)।
আমরা ইনশাআল্লাহ কোনো না কোনোভাবে আয়াত নম্বর ২৮ পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা করব, দেখা যাক।
আল্লাহ এখন কিছু অলংকারিক প্রশ্ন করতে যাচ্ছেন। প্রশ্নের একটি আক্ষরিক উদ্দেশ্য থাকে এবং একটি অলংকারিক উদ্দেশ্যও থাকে। তো, আপনাদের মধ্যে যারা আরবির উচ্চতর পড়াশোনায় আগ্রহী, عِلْم الْمَعَانِي-তে (অর্থের বিজ্ঞান), আমরা আসলে প্রশ্নের পেছনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ নিয়ে পড়াশোনা করি।
উদাহরণস্বরূপ, যখন কেউ কোনো প্রশ্ন করে, সে তথ্য চায়। এটাই প্রশ্ন করার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু আরও অনেক কারণে আপনি প্রশ্ন করেন। যেমন, "সিরিয়াসলি?" আপনি যখন বলেন "সিরিয়াসলি?", আপনি কিন্তু কোনো তথ্য খুঁজছিলেন না। আপনি আসলে বলছিলেন, "তুমি এতটা বোকা কীভাবে হতে পারো?" যা কিনা, মজার ব্যাপার হলো, নিজেও একটা প্রশ্ন। মূলত আপনি বলছেন, "তুমি আসলেই অনেক বোকা।"
অথবা ধরুন, কেউ বলল, "তুমি কি ওটা খাবে?" যা হয়তো তার বলার একটা ভঙ্গি যে, "ওটা খেয়ো না, আমি ওটা খেতে চাই।" কিন্তু সে এটাকে একটা প্রশ্নের আকারে পেশ করল। অথবা আপনি বলতে পারেন, "এখানে কি গরম লাগছে?" আর এটা আপনার বলার একটা উপায় যে, "প্লিজ, এসিটা একটু চালু করুন।" তাই না? সুতরাং, মাঝে মাঝে আপনি প্রশ্ন করেন, কিন্তু আসলে আপনি প্রশ্ন করছেন না। আপনি অন্য কিছু করছেন। ঠিক?
এটা অলংকারশাস্ত্র বা রেটোরিকের অধ্যয়নের একটি অংশ। আধুনিক ভাষায় বলতে গেলে, এটাকে বলা যায় 'কমিউনিকেশন সাইকোলজি' বা যোগাযোগ মনোবিজ্ঞান। আমরা যখন ভাষা নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন একে بَلَاغَة (বালাগাহ) বলি। তো, بَلَاغَة-এর অধ্যয়নের বেশিরভাগটাই হলো যোগাযোগ মনোবিজ্ঞান।
যাইহোক, আল্লাহ যখন এখানে প্রশ্নটি করছেন— أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?) (সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২৪)।
এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য কী? এই প্রশ্নের উদ্দেশ্যকে এখানে বলা হবে تَنْكِير বা إِنْكَار। এর মানে হলো— মানুষ যা কিছু চায়, তা তারা কখনোই পাবে না। কিসে তোমাকে এই ধারণা দিলো যে মানুষ যা চাইবে, তা-ই পেয়ে যাবে? আল্লাহ বলছেন, এই জীবনটা আমার ইচ্ছাপূরণের জায়গা নয়।
আর যে শব্দটিকে আমি বারবার "ইচ্ছা" বা "আকাঙ্ক্ষা" হিসেবে অনুবাদ করছি, তা হলো تَمَنِّي (তামান্নি)। কিন্তু এই শব্দটি অনেক রসালো। সত্যিই খুব রসালো। যাইহোক, এখানে শব্দের একটি মজার খেলা আছে। মদিনার লোকেরা যে দেবীর পূজা করত, তার নাম কী ছিল? مَنَاة (মানাত), যা এই একই মূল থেকে এসেছে। أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?)। সুতরাং, এখানে একটি শব্দের খেলাও আছে।
'তামান্নি'-র আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা, ভাষাগত সংজ্ঞা হলো—যখন আপনি মন থেকে চান যে আপনার কাঙ্ক্ষিত কিছু একটা ঘটুক, এবং আপনি নিশ্চিত নন, আপনি নিজের সাথে কথা বলতে থাকেন, "এটা কি ঘটবে? এটা কি ঘটবে না? ইশ, যদি এটা ঘটত! আমি ভাবছি এটা ঘটবে কি না…"। যখন আপনি চান কোনো কিছু ঘটুক বা না ঘটুক এবং আপনি নিজেকে এই প্রশ্ন করতেই থাকেন, আপনি সেই চিন্তার মধ্যেই বাস করেন—সেটাকেই আসলে বলা হয় تَمَنِّي (তামান্নি)।
'তামান্নি'-র একটি ভালো অনুবাদ হতে পারে 'আকাশ-কুসুম কল্পনা' বা 'Wishful Thinking'। আর যে মানুষটা, কী যেন বলে এটাকে? যে 'লা-লা ল্যান্ড' বা কল্পনার জগতে বাস করে। সেটাও হবে 'তামান্নি'।
কিন্তু 'তামান্নি'র আরও কিছু খুবই মজার অর্থ আরবি ভাষায় আছে। আমি সেগুলো এখানে হলুদ রঙে চিহ্নিত করেছি। এগুলো হলো الْمَعَانِي الثَّوَانِي (দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ)। التَّمَنِّي বা الْمَنِي শব্দটি الْقِرَاءَةُ بِلَا فِقْهٍ (আল-কিরাআতু বি-লা ফিকহিন) অর্থাৎ 'না বুঝে পড়া'র অর্থেও আসে। যখন আপনি কিছু একটা পড়েন কিন্তু বোঝেন না, আরবরা তাকেও تَمَنِّي (তামান্নি) বলে। تَمَنَّى মানে সে তেলাওয়াত করল বা পড়ল, কিন্তু بِلَا فَهْمٍ (না বুঝে)।
تَمَنِّي (তামান্নি)-র আরেক অর্থ হলো মিথ্যা বলা (كَذِب)। তো আমি চাই আপনারা এইগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। আমি এটা আপনাদের জন্য ইংরেজিতে লিখে রাখিনি, তাই আপনারা লিখে নিন।
এক. না বুঝে পড়া।
দুই. মিথ্যা বলা।
তিন. تَمَنِّي হচ্ছে شُرْبُ الْخَمْر (শুবরুল খামর) বা মদ পান করা। 'তামান্নি'-র অর্থ মদ পান করাও হয়।
চার. مُنِيَ بِمَعْنَى ابْتُلِيَ (মুনিয়া বি-মা'না ইবতুলিয়া), অর্থাৎ 'তামান্নি'-র আরেক অর্থ হলো পরীক্ষিত হওয়া, পরীক্ষায় পড়া।
এবং একটি খুবই আকর্ষণীয় অর্থ হলো— مَنِيَّة (মানিয়্যাহ) মানে হলো মৃত্যু। মৃত্যুর জন্য এটি একটি খুবই প্রচলিত শব্দ। কিছু হাদিসেও এটি পাওয়া যায়, আরবি প্রবাদ-প্রবচনেও পাওয়া যায়। مَنِيَّة (মানিয়্যাহ) আসলে মৃত্যুর একটি প্রতিশব্দ।
তাহলে আমরা কী কী পেলাম? না বুঝে পড়া, মিথ্যা বলা, মদ পান করা, পরীক্ষিত হওয়া, এবং মৃত্যু। আর এই সবগুলোই হলো আকাশ-কুসুম কল্পনারই ফলাফল। কারণ যখন আপনি আকাশ-কুসুম কল্পনা করেন, তখন যা লেখা আছে, আপনি তা পড়েন না; আপনি যা পড়তে চান, তাই পড়েন। ফলে আপনি পড়ছেন, কিন্তু না বুঝেই পড়ছেন। আপনি যখন পড়ছেন, আপনি আসলে নিজের মতো করে অর্থ তৈরি করছেন। এটাই تَمَنِّي (তামান্নি)।
تَمَنِّي (তামান্নি) মানে মিথ্যা বলাও বটে, কারণ আকাশ-কুসুম কল্পনা আপনাকে নিজের কাছে এবং অন্যের কাছে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে। সত্য সম্পর্কে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে।
تَمَنِّي (তামান্নি) এক ধরনের নেশার মতো, মাদকের মতো। মদ্যপানের মতো। কারণ আপনার আকাশ-কুসুম কল্পনা আপনাকে নেশাগ্রস্ত করে ফেলতে পারে এবং আপনি তার মধ্যেই হারিয়ে যান। কিছু মানুষ আছে যারা কোনো কিছুর প্রতি আবিষ্ট বা মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেমন, চরম تَمَنِّي-র একটি ভালো মনস্তাত্ত্বিক উদাহরণ হতে পারে ওসিডি (অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার)। কিছু মানুষ কোনো ব্যক্তির প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে যায়, কোনো ভাবনার প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে যায়। আর সেটাই তাদের تَمَنِّي (তামান্নি) হয়ে দাঁড়ায়। যেন তারা সেটার উপর মাতাল হয়ে আছে।
এবং এটি আপনাকে মৃত্যুর দিকেও নিয়ে যেতে পারে। এটা আপনার জন্য মৃত্যু। এটা مَوْت (মাউত)।
সুতরাং এই দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থগুলো যেন এই মারাত্মক জিনিসটা সম্পর্কে আরবদের ধারণাকে ধারণ করছে—এই আকাশ-কুসুম কল্পনা, যা একজন মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
আর মানুষ কেন পীর-দরবেশের কাছে যায়? কেন যায়? এই تَمَنِّي-র কারণেই। তাই আল্লাহ প্রশ্ন করছেন, "তাহলে তোমরা এই পুরো ধর্ম এবং এই নামগুলো তৈরি করেছো শুধু তোমাদের এই আকাঙ্ক্ষাগুলোর জন্য? শুধু তোমাদের আকাশ-কুসুম কল্পনার জন্য? তোমরা কি সত্যিই ভাবো যে এটা তোমাদের সকল ইচ্ছা পূরণ করে দেবে?"
আল্লাহ মানুষকে সংগ্রামের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي كَبَدٍ (আমি অবশ্যই মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্টের মধ্যে)। (সূরা আল-বালাদ, আয়াত: ৪)। এই জীবনটা আসলে সুখের জন্য নয়। মানে, আমাদের সকলেরই সুখের মুহূর্ত আসে। কিন্তু যখন আপনার জীবনে কোনো কিছুই ভুল হচ্ছে না, সবকিছু ঠিকঠাক, তখনো এমন কোনো মানুষ এখানে বা এই গ্রহে নেই, যার মনে কোনো নেতিবাচক চিন্তা আসে না বা সে কোনো কিছু নিয়ে অখুশি নয়। এমনকি যখন সবকিছু নিখুঁত থাকে, তখনও। কারণ এই জীবনে নিখুঁতভাবে সুখ বলে কিছু নেই।
যখন আপনার সবকিছু থাকে, তখনও আপনার মনে হয়, ইশ! যদি অন্য কিছু থাকত। আর যখন আপনার সবকিছু থাকে, আপনি বলেন, "ইশ! যদি এটা আরও আগে পেতাম। গত বছর কেন এটা হলো না?" আর যখন আপনি সেরা ছুটিতে যান, তখন মনে হয়, "ইশ! যদি এটা কখনও শেষ না হতো!" আরে ভাই! আপনি কি একটু সুখী হতে পারেন না? না, আমি পারি না। কারণ আমি মানুষ। কারণ আল্লাহ বলছেন, أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?)। মানুষ যা চায়, তা-ই পেতে পারে না। এই জীবনটা সে জন্য নয়।
আর টিকটকের বিষয়টাই দেখুন—কীভাবে সুখী হওয়া যায়, ২০ মিলিয়ন ভিউ! "এটা দেখুন আর আপনি সুখী হয়ে যাবেন।" "তিন সেকেন্ডে সুখ!" হায় আল্লাহ! মানবতা একটা জিনিসের পেছনেই দৌড়াচ্ছে। আর সেটা কী? সুখ। শুধু দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে। আর আপনি সর্বোচ্চ যা পাবেন, তা হলো এক মুহূর্তের সুখ। কয়েক সেকেন্ডের সুখ। একদিনের সুখ। নাহ, পুরো দিনও না, বরং এক বিকেলের সুখ। যেমন, সমাবর্তন অনুষ্ঠান, আপনি súper সুখী। তারপর আপনি গাড়িতে উঠলেন আর কেউ কিছু একটা বলল আর… সব শেষ!
সুখ জিনিসটা এমনই, এটা আসে আবার চলে যায়, আসে আবার চলে যায়। আপনি কি আপনার পুরো জীবন এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি এমন এক জিনিসের উপর ভিত্তি করে গড়তে চান, যা এতটাই অস্থায়ী? أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?)
আপনি কী বলছেন? তাহলে কি আমাদের সবসময় হতাশ থাকতে হবে? ইসলাম কি হতাশা চায়? আমার কাছে আপনার কথাগুলো এমনই শোনাচ্ছে। আমি এটা বলছি। এটা আপনাদের হয়ে আমার কণ্ঠ।
আচ্ছা, ইসলাম আসলে বর্ণনা করে যে সুখ একটি উপজাত (byproduct), এটি কোনো লক্ষ্য নয়। এটা একটা উপজাত। আপনি যখন খাবার রান্না করছেন, তার সুগন্ধটা একটা উপজাত। আপনি যখন একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন যাপন করবেন, তখন আনন্দ—আপনি আনন্দের আরও অনেক মুহূর্ত পাবেন একটি উপজাত হিসেবে। আর যাইহোক, যখন আপনার আনন্দের মুহূর্ত আসবে না, আপনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়বেন না। আপনি ভেঙে পড়বেন না।
সারা বিশ্বে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের হার বাড়ছে, এটা কি আপনারা জানেন? নব্বইয়ের দশকে গ্রাফটা ছিল এমন, ২০০০-এর দশকে এমন, আর গত ৭ বছরে এটা এমন খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ডিপ্রেশন এবং আত্মহত্যার হারের গ্রাফটা দেখুন, এটা এমনভাবে বেড়েছে। আর এটা সোশ্যাল মিডিয়ার বিকাশের টাইমলাইনের সাথে হুবহু মিলে যায়। যখনই সোশ্যাল মিডিয়া আরও বেশি ব্যক্তিগতকৃত (personalized) হয়েছে, কিশোর-কিশোরীরা আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েছে।
কেন? সম্পর্কটা কী? কারণ আপনি অন্য কাউকে দেখেন আর আপনার ইচ্ছা হয়, ইশ! যদি আমারও ওটা থাকত। আপনার মধ্যে আরও বেশি করে 'তামান্নি' জন্মায়। আর যত বেশি 'তামান্নি' আপনার মধ্যে আসবে, আর আপনি ভাববেন 'তামান্নি' আপনাকে সুখ দেবে, কিন্তু বাস্তবতা কী? ডেটা আপনাকে কী দেখাচ্ছে? 'তামান্নি' মানুষকে কী দিচ্ছে? এটা তাদের মৃত্যু দিচ্ছে। আত্মহত্যার হার— الْمَنِيَّة (আল-মানিয়্যাহ), الْمَوْت (আল-মাউত)।
আপনি এটা একটা ক্লাসিক্যাল ডিকশনারিতে পড়বেন আর তারপর সাইকোলজি পেপারে পরিসংখ্যান দেখবেন আর আপনার মনে হবে—আরে! এই আরবরা তো তাদের ভাষাটাকে আসলেই চিনত! আল্লাহ একটা কারণেই এই ভাষাকে বেছে নিয়েছেন।
أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?)। এর দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ হলো— মানুষ কি এমন কিছু চায় যা তাকে মৃত্যু দেবে? মানুষ কি নিজেকে মিথ্যা বলতে চায়? মানুষ কি শুধু মাতাল, বিভ্রমে, আত্ম-প্রবঞ্চনায় থাকতে চায়? সে কি এটাই চায়? أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?)। এটা এত শক্তিশালী একটা প্রশ্ন! এটা সেই সব আয়াতগুলোর মধ্যে একটা যা আপনাকে জাগিয়ে দেয়! أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?)। এটা সেই আয়াতগুলোর একটা যা আপনার ফ্রিজের উপর লাগিয়ে রাখা উচিত। আপনার মা ফ্রিজে যে الٓمٓ বা طه বা كهيعص লাগিয়ে রেখেছেন, ওগুলো সরিয়ে বরং এটা লাগিয়ে দিন, যেন এটা আপনার মুখে একটা চড় মারে। أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?)।
তিনি বলেন—আমরা এর কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছি, তাই আমি এটা বাদ দিয়ে যাচ্ছি— فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (সুতরাং শেষ ও শুরু, উভয়ই আল্লাহর মালিকানাধীন)। (সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২৫)।
আমাদের বিশ্বে 'প্রেজেন্টিজম' বা 'বর্তমানবাদে'র একটা ধারণা জেগে উঠছে, আর আমি আপনাদেরকে সেটা সম্পর্কে বলতে চাই। "বর্তমানের জন্য বাঁচো।" "কারও কাছ থেকে কোনো নেতিবাচক কথা শোনার দরকার নেই, ওরা সবাই বিষাক্ত।" "এইসব নার্সিসিস্টদের কথা শুনো না।" আপনি যে সবাইকে নার্সিসিস্ট বলে বিচার করতে পারছেন, এটা নিশ্চয়ই আপনার বিনয়ের পরিচায়ক! তাই না? "কোনো নেতিবাচকতা শুনো না, কাউকে তোমার সমালোচনা করতে দিও না।" "তোমার সুখ খুঁজে নাও।" "নিজেকে ভালোবাসো।" "তোমার স্বপ্নের পেছনে ছোটো।" "বর্তমানের মধ্যে থাকো।" "আজকের জন্য বাঁচো।" "কালকের চিন্তা করো না।" "উপস্থিত থাকো।"
এগুলোই হলো সেই সব ইতিবাচকতার কথা, যা লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছে। আর মানুষ আপনার বোকামির সুযোগ নিয়ে পয়সা কামাচ্ছে। "আর আমি বর্তমান মুহূর্তে বাঁচতে চাই। আমি সুখী হতে চাই।" "এই ভিডিওটিই হবে আপনার সুখের রহস্য।" আরে ভাই, আপনি এতগুলো "সুখের রহস্য" ভিডিও দেখেছেন যে, এটাই যথেষ্ট প্রমাণ হওয়া উচিত যে এটা কাজ করছে না। এটাই যথেষ্ট প্রমাণ হওয়া উচিত।
কিন্তু জানেন, আমি এই আয়াত—فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ-এর অধীনে কেন এই কথাগুলো রাখলাম? আমাকে বলতে দিন এই আয়াতের অর্থ কী। একমাত্র আল্লাহই চূড়ান্ত শেষ এবং পরম শুরুর মালিক। পরম শুরু এবং চূড়ান্ত শেষ একচেটিয়াভাবে আল্লাহর মালিকানাধীন।
أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ-এর ঠিক পরেই এই আয়াতটি কেন? সংযোগটা কী? মানুষ যা চায়, তা হলো 'এই মুহূর্তে'। আপনার ইচ্ছা, আপনার চিন্তা, আপনার মাতাল অবস্থা, আপনার বিভ্রম—সবকিছু 'এই মুহূর্তে'র জন্য। আর আপনি, কারণ আপনি 'এই মুহূর্তে'র মধ্যে এতটাই মাতাল হয়ে আছেন—আমি এতটাই মাতাল হয়ে আছি—যে আমি সেই পরম শুরুর কথা ভাবি না, যখন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে এই পৃথিবীতে রেখেছিলেন। আর আমি আখিরাত-এ কী আসছে, তা নিয়েও ভাবি না। আমি পেছনেও তাকাই না, সামনেও তাকাই না। আমি শুধু কী নিয়ে ভাবছি? 'এই মুহূর্ত'।
আর আল্লাহ বলছেন, أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে?), فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (সুতরাং শেষ ও শুরু, উভয়ই আল্লাহর মালিকানাধীন)। কুরআন কী করছে? এটি আপনাকে অনেক দূরে, ভবিষ্যতের বিচার দিবসে নিয়ে যায় এবং আপনাকে অনেক পেছনে, অতীতের জাতি ও নবীদের কাছে নিয়ে যায়। এটি আপনাকে মানবতার সূচনা দেখায়। সবকিছু, যাতে আপনি আপনার অবস্থান সম্পর্কে একটি সঠিক দৃষ্টিকোণ পান।
আপনি যদি না জানেন আপনি কোথা থেকে এসেছেন এবং আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তার মানে আপনি হারিয়ে গেছেন। তার মানে আপনার পরিচয়ের কোনো বোধ নেই। আপনি যদি আমাকে বলতে না পারেন আপনি কোথা থেকে এসেছেন, আপনার উৎস কী, তাহলে আপনার স্মৃতিভ্রংশ (amnesia) হয়েছে। আপনি যদি আমাকে বলতে না পারেন আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তাহলে আপনি উন্মাদ।
"আপনি কোথায় যাচ্ছেন?"
"আমি জানি না।"
"আপনি এখানে কী করছেন?"
"আমি জানি না।"
"আপনি কোথা থেকে এসেছেন?"
"আমার মনে নেই।"
"কিন্তু আমার খুব স্যান্ডউইচ খেতে ইচ্ছে করছে।"
এটা শুনলে মনে হয়, আপনি কোনো পাগলাগারদে আছেন। আল্লাহ এখানে এমনই একজনের বর্ণনা দিচ্ছেন। যে মাতাল, সে হয়তো এমনই হয়, তাই না? تَمَنِّي-র সাথে মাতাল হওয়ারও সম্পর্ক আছে। তাদের কোনো ধারণাই নেই তারা জীবনে কী করছে। আর এটা একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
"হে যুবক, তুমি তোমার জীবন নিয়ে কী করতে চাও?"
"আমি জানি না।"
"তুমি কি তোমার বাবার জীবন সম্পর্কে কিছু জানো?"
"আমি জানি না।"
"তাকে জিজ্ঞেস করো।"
"আপনি জানেন… আপনি অতীত সম্পর্কে কিছুই জানেন না, ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুই জানেন না। পরিচয়ের কোনো বোধ নেই।"
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (সুতরাং শেষ ও শুরু, উভয়ই আল্লাহর মালিকানাধীন)। আল্লাহ সেই শুরুর মালিক, যা আপনি ভুলে গেছেন। আর আপনি আখিরাতকেও ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু সেটাও আল্লাহরই অধীনে। মানে, আপনি কোথা থেকে শুরু করেছেন আর কোথায় শেষ করবেন, তা আল্লাহরই হাতে। আপনি যত খুশি মাতাল হয়ে থাকতে পারেন। এটা আমার প্রিয় আয়াতগুলোর একটি এই বাস্তবতা নিয়ে—
إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ (হে মানুষ, তুমি তোমার রবের দিকে কঠোর চেষ্টায় রত আছো এবং তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে)। (সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াত: ৬)।
তুমি মাদক নিতে পারো, তুমি মদ খেতে পারো, তুমি ব্যভিচার করতে পারো, তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। তুমি বিশ্বাস করতে পারো, নাও করতে পারো। সালাত পড়তে পারো, নাও পড়তে পারো। তুমি কিন্তু তোমার রবের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছ এবং তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবেই। এমন কেউ নেই যে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে না। তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবেই। فَمُلَاقِيهِ (এবং তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে)।
তাই তিনি বলছেন, فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (সুতরাং শেষ ও শুরু, উভয়ই আল্লাহর মালিকানাধীন)। এটা জানা যে আল্লাহ আখিরাতের মালিক, এটা একজন বিশ্বাসীকে 'তামান্নি'র সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। কারণ আপনার এবং আমারও এমন কিছু জিনিস আছে যা আমরা চাই। এই জীবনে আমরা কিছু জিনিস চাই এবং আমরা সেগুলো পাই না। এমন কিছু জিনিস আছে যা আমাদের আটকে রাখে। এমন পরিস্থিতি আছে যা আমার ইচ্ছাপূরণে বাধা দেয়। আর আমি একজন বিশ্বাসী, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি, আমি আল্লাহকে ভালোবাসি, আমি আল্লাহর কাছে সালাত আদায় করি, কিন্তু আমি এখনও অতৃপ্ত। এটা একটা বাস্তবতা।
আর জানেন? যখন আল্লাহ বলেন, فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (সুতরাং শেষ ও শুরু, উভয়ই আল্লাহর মালিকানাধীন), তখন যারা উলা (শুরু) কে সম্মান করে এবং যারা আখিরাত-এ বিশ্বাস করে, তারা আসলে তাদের 'তামান্নি' বা আকাঙ্ক্ষাগুলো পাবে। তারা সত্যিই তা পাবে। তারা যা চেয়েছিল এবং তার চেয়েও বেশি পাবে। আল্লাহ জানেন আপনি কী কামনা করছিলেন। আর শেষে, তিনি আপনাকে তা-ই দেবেন যা আপনি কামনা করছিলেন।
আল্লাহ জানেন আপনি কী বঞ্চনার মধ্য দিয়ে গেছেন। তিনি তা জানেন। আপনার এবং একজন অবিশ্বাসীর মধ্যে পার্থক্য হলো, তাদেরও বঞ্চনা আছে এবং তারা মনে করে তারা তা পূরণ করতে পারবে, কিন্তু তা পূরণ করার পরেও তাদের বঞ্চনা থেকে যায়। আর তারপর তারা নতুন এক বঞ্চনায় ভোগে। কারণ এই জীবনটা আসলে কিছুটা বঞ্চনারই নাম।
মনে আছে আমরা যখন جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ (জান্নাতুল মা'ওয়া) নিয়ে কথা বলছিলাম? একই ধারণা ছিল। একমাত্র বাগান যেখানে আপনি এই সমস্ত বঞ্চনা থেকে আশ্রয় পাবেন, তা আল্লাহর কাছেই আছে। সেটাই جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ (জান্নাতুল মা'ওয়া)। এখানের সমস্ত 'জান্নাত' আপনার হৃদয়ে কিছু না কিছু 'তামান্নি' বা অতৃপ্তি রেখেই যাবে। এটা আপনাকে পূর্ণ করবে না। এটা আমাকে পূর্ণ করবে না।
أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنَّىٰ فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (নাকি মানুষ যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করে, তা-ই সে পেয়ে যাবে? সুতরাং শেষ ও শুরু, উভয়ই আল্লাহর মালিকানাধীন)।