أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّى (মানুষ কি তা-ই পাবে, যা সে আকাঙ্ক্ষা করে?)
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (সুতরাং, পরকাল ও ইহকাল আল্লাহরই মালিকানাধীন।)
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي (হে আমার রব, আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজকে সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।)
فَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَىٰ رَسُولِ اللَّهِ وَعَلَىٰ آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِينَ (সুতরাং, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর রাসূল, তাঁর পরিবার ও তাঁর সকল সাহাবীর উপর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক।)
أما بعد (অতঃপর), আবারো সবাইকে, السلام عليكم ورحمة الله وبركاته।
আমরা আজ আয়াত নম্বর ২৮ পর্যন্ত পৌঁছানোর চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ যেকোনো ভাবেই হোক। চলুন দেখা যাক।
আল্লাহ এখন কিছু অলংকারিক প্রশ্ন করতে যাচ্ছেন। প্রশ্নের একটা আক্ষরিক উদ্দেশ্য থাকে, আবার একটা অলংকারিক উদ্দেশ্যও থাকে। তো আপনাদের মধ্যে যারা আরবির উচ্চতর পড়াশোনায় আগ্রহী, علم المعاني-তে, অর্থাৎ অর্থের বিজ্ঞানে, আমরা একটা বিষয় পড়ি যার নাম হলো—প্রশ্নের পেছনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ।
যেমন ধরুন, কেউ যখন প্রশ্ন করে, সে আসলে তথ্য জানতে চায়। এটাই প্রশ্ন করার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু আরও অনেক কারণে আপনি প্রশ্ন করেন।
যেমন, কেউ বললো, "সিরিয়াসলি?"
আপনি যখন "সিরিয়াসলি?" বলেন, আপনি আসলে কোনো তথ্য খুঁজছিলেন না। আপনি বলতে চাইছিলেন, "কীভাবে এতটা বোকা হতে পারো?" যেটা কিনা, মজার ব্যাপার হলো, সেটাও একটা প্রশ্ন। মূলত আপনি বলতে চাইছেন, "তুমি আসলেই অনেক বোকা।"
অথবা ধরুন, কেউ বললো, "ওটা কি তুমি খাবে?"
হয়তো এটা তার বলার একটা ভঙ্গি যে, "ওটা খেয়ো না, আমি খেতে চাই।" কিন্তু সে এটা একটা প্রশ্নের আকারে বললো।
অথবা আপনি বলতে পারেন, "এখানে কি একটু বেশি গরম লাগছে না?"
আর এটা আপনার বলার একটা উপায় যে, "প্লিজ, এসি-টা একটু অন করো।" তাই না? তো, মাঝে মাঝে আপনি প্রশ্ন করেন কিন্তু আপনি আসলে প্রশ্ন করছেন না, আপনি অন্য কিছু করছেন। ঠিক?
এটা অলংকারশাস্ত্র বা Rhetoric-এর একটা অংশ। আধুনিক ভাষায় বলতে গেলে, কমিউনিকেশন সাইকোলজি। আমরা যখন ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করি, তখন একে بلاغة বলি। তো, بلاغة-এর বেশিরভাগটাই আসলে কমিউনিকেশন সাইকোলজি।
যাইহোক, আল্লাহ যখন এখানে প্রশ্নটি করছেন:
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
"নাকি মানুষ যা-ই চাইবে, তা-ই পাবে? যা-ই সে আকাঙ্ক্ষা করবে?"
এই প্রশ্নের উদ্দেশ্যটা কী? এই প্রশ্নের উদ্দেশ্যকে এখানে বলা হয় تنكير বা إنكار। এর মানে হলো—মানুষ যা চায়, তা কখনোই পাবে না। কী দেখে তোমার মনে হলো যে মানুষ যা চায়, তা-ই পেতে পারে? আল্লাহ বলছেন, এই জীবনটা আমার ইচ্ছাপূরণের জায়গা নয়।
আর যে শব্দটাকে আমি বার বার "wishes" বা "আকাঙ্ক্ষা" বলে অনুবাদ করছি, তা হলো تمني (তামান্নি)। কিন্তু এই শব্দটা অনেক রসালো। আসলেই রসালো।
যাইহোক, এখানে একটা মজার শব্দ খেলা আছে। মদিনার লোকেরা যে দেবীর পূজা করতো, তার নাম কী ছিল? مناة (মানাত), যা একই মূল থেকে এসেছে।
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
তো, এটাও একটা শব্দের খেলা।
التمني -এর আভিধানিক সংজ্ঞা হলো:
"যখন আপনি মন থেকে চান যে আপনার কাঙ্ক্ষিত কিছু একটা ঘটুক, এবং আপনি নিজের সাথে কথা বলতে থাকেন—এটা কি হবে? নাকি হবে না? ইশ, যদি হতো! আমি ভাবছি এটা হবে কি না। আমি সত্যিই চাই এটা হোক…।" যখন আপনি কোনো কিছু ঘটা বা না ঘটার ব্যাপারে এতটাই ভাবেন এবং নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকেন, সেই চিন্তার জগতে বাস করাকে আসলে تمني (তামান্নি) বলা হয়।
تمني-এর একটা ভালো অনুবাদ হতে পারে "wishful thinking" বা "কল্পনা বিলাস"। আর যারা এমন জীবনে অভ্যস্ত, তাদের কী বলে? দিবাস্বপ্নের জগতে বাস করা। ওটাই হলো تمني।
কিন্তু আরবি ভাষায় تمني-এর আরও কিছু দারুণ অর্থ আছে। আমি এখানে হলুদ রঙে সেগুলো চিহ্নিত করেছি। এগুলো হলো المعاني الثواني বা দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ।
التمني শব্দটি বা الماني শব্দটি القراءة بلا فقه-এর অর্থেও আসে। যখন আপনি কিছু না বুঝে পড়েন, তাকেও تمني বলা হয়। تمنى تلا أو قرأ ولكن بلا فهم – সে পড়েছে বা তিলাওয়াত করেছে, কিন্তু বোঝেনি।
تمني-এর আরেকটা অর্থ হলো মিথ্যা বলা, كذب।
তো আমি চাই আপনারা এগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। আমি এগুলো ইংরেজিতে আপনাদের জন্য লিখে দিইনি, তাই আপনারা লিখে নিন।
এক, না বুঝে পড়া।
দুই, মিথ্যা বলা।
তিন, تمني মানে تمنى أي شرب الخمر – মদ পান করা।
এবং منى بمعنى ابتلى – تمني-এর আরেকটা অর্থ হলো পরীক্ষায় ফেলা হওয়া, to be put to the test।
আর একটা খুবই আকর্ষণীয় অর্থ হলো— منية (মানিয়াহ) মানে আসলে মৃত্যু। মৃত্যুর জন্য এটা একটা খুবই প্রচলিত শব্দ। কিছু হাদিসেও এটা পাওয়া যায়। আরবি প্রবাদ-প্রবচনেও এর ব্যবহার আছে। منية আসলে মৃত্যুর আরেক নাম।
তাহলে আমরা কী কী পেলাম?
- না বুঝে পড়া।
- মিথ্যা বলা।
- মদ পান করা।
- পরীক্ষায় পড়া।
- এবং মৃত্যু।
আর এই সবগুলোই হলো "wishful thinking" বা কল্পনা বিলাসের পরিণতি। কারণ আপনি যখন কল্পনা বিলাসে মগ্ন থাকেন, তখন যা লেখা আছে তা আপনি পড়েন না, বরং আপনি যা পড়তে চান, সেটাই পড়েন। তাই আপনি না বুঝেই পড়ছেন। এমনকি যখন আপনি পড়ছেন, আপনি নিজের মনের মতো অর্থ তৈরি করছেন। এটাই تمني।
تمني মানে মিথ্যা বলাও। কারণ কল্পনা বিলাস আপনাকে নিজের কাছে এবং অন্যের কাছে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে। সত্যকে নিয়ে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে।
تمني একটা নেশার মতো, একটা মাদকের মতো। যেমনটা মদ পান করা। কারণ আপনার কল্পনা বিলাস আপনাকে নেশাগ্রস্ত করে তুলতে পারে আর আপনি সেটার মধ্যেই হারিয়ে যান। কিছু মানুষ আছে যারা কোনো কিছুর প্রতি আবিষ্ট বা obsessed হয়ে যায়। যেমন, চরম تمني-এর একটা ভালো মনস্তাত্ত্বিক উদাহরণ হতে পারে OCD (Obsessive Compulsive Disorder)। কিছু মানুষ কোনো ব্যক্তির প্রতি, কোনো চিন্তার প্রতি আবিষ্ট হয়ে পড়ে। আর সেটাই তাদের تمني হয়ে দাঁড়ায়। যেন তারা সেটার নেশায় বুঁদ হয়ে আছে।
আর এটা আপনাকে মৃত্যুর দিকেও নিয়ে যেতে পারে। এটা আপনার বিনাশের কারণ। এটা موت বা মৃত্যু।
এই দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থগুলো যেন আরবদের কল্পনাকে ধারণ করে রেখেছে এই মারাত্মক জিনিসটা সম্পর্কে—এই কল্পনা বিলাস, যা একটা মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
এখানে আমার একটা dad joke আছে: Show me تمني (তামান্নি)… Show me the money!
কিছু মানুষ আছে যারা শুধু এটাই চায়।
আর মানুষ কেন পীর-দরবেশের কাছে যায়? কেন মাজারে যায়? تمني-এর কারণে।
তো আল্লাহ প্রশ্ন করছেন, "তাহলে তোমরা এই পুরো ধর্ম, এই নামগুলো—সবকিছু বানিয়েছ শুধু তোমাদের এই আকাঙ্ক্ষাগুলোর জন্য? শুধু তোমাদের এই কল্পনা বিলাসের জন্য?" তোমরা কি আসলেই ভাবো যে এসব তোমাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করবে?
আল্লাহ মানুষকে সংগ্রামের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ (আমি অবশ্যই মানুষকে শ্রমনির্ভররূপে সৃষ্টি করেছি)। এই জীবনটা আসলে সুখের জন্য নয়। মানে, আমাদের সবার জীবনেই সুখের মুহূর্ত আসে। কিন্তু যখন আপনার জীবনে কোনো কিছুই ভুল হচ্ছে না, সবকিছু ঠিকঠাক, এইখানে বসা বা পৃথিবীর কোথাও এমন কোনো মানুষ নেই, যার মনে কোনো নেতিবাচক চিন্তা আসে না বা সে কোনো কিছু নিয়ে অখুশী নয়। এমনকি যখন সবকিছু নিখুঁত থাকে, তখনও। কারণ এই জীবনে নিখুঁত সুখ বলে কিছু নেই।
যখন আপনার সবকিছু থাকে, তখনও আপনার মনে হয়, ইশ! যদি অন্য কিছু থাকতো! আর যখন আপনার সবকিছু থাকে, আপনি বলেন, "ইশ! এটা যদি আরও আগে পেতাম! গত বছর কেন এটা হলো না?" আর যখন আপনি সেরা ছুটিতে যান, আপনি বলেন, "ইশ! যদি এটা কখনো শেষ না হতো!"
আরে ভাই! তুমি কি শুধু সুখী হতে পারো না?
"না, আমি পারি না। কারণ আমি মানুষ।"
কারণ আল্লাহ বলেছেন: أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ (মানুষ কি যা চায়, তা পেতে পারে?)
মানুষ যা চায়, তা পেতে পারে না। এই জীবনটা সে জন্য নয়।
আর এই টিকটক-এর যুগে—"কীভাবে সুখী হবেন", ২০ মিলিয়ন ভিউ। "এটা দেখুন আর আপনি সুখী হয়ে যাবেন।" "তিন সেকেন্ডে সুখ।" হায় আল্লাহ! মানবতা কেবল একটা জিনিসের পেছনেই দৌড়াচ্ছে। আর সেটা কী? সুখ। শুধু দৌড়াচ্ছে।
আর আপনি সর্বোচ্চ যা পাবেন, তা হলো এক মুহূর্তের সুখ। কয়েক সেকেন্ডের সুখ। এক দিনের সুখ। এমনকি পুরো দিনও না, এক বিকেলের সুখ। যেমন, সমাবর্তন অনুষ্ঠান, আপনি súper happy। তারপর আপনি গাড়িতে উঠলেন আর কেউ কিছু একটা বললো, আর… সব শেষ।
সুখ জিনিসটা এমনই। এটা আসে আর যায়, আসে আর যায়। আপনি কি আপনার পুরো জীবন, আপনার জীবনযাপনের পদ্ধতি এমন এক জিনিসের উপর ভিত্তি করে গড়তে চান যা কিনা এতটাই অস্থায়ী?
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
আপনি কী বলছেন? তার মানে কি আমাদের সারাক্ষণ বিষণ্ণ থাকতে হবে? ইসলাম কি বিষণ্ণতা চায়? আপনার কথা তো আমার কাছে এমনই শোনাচ্ছে। আমি এটা বলছি। এটা আপনাদের হয়ে আমার কণ্ঠ, আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করছে।
আসলে, ইসলাম বর্ণনা করে যে সুখ হলো একটা উপজাত বা byproduct। এটা কোনো লক্ষ্য নয়। এটা একটা উপজাত। আপনি যখন খাবার রান্না করছেন, তার সুগন্ধটা হলো একটা উপজাত। আপনি যখন একটা উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন যাপন করবেন, তখন আনন্দ—আপনি আনন্দের আরও অনেক মুহূর্ত পাবেন, একটা উপজাত হিসেবে। আর যাইহোক, যখন আপনার আনন্দের মুহূর্ত আসবে না, আপনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়বেন না। আপনি ভেঙে পড়বেন না।
সারা বিশ্বে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতার হার বাড়ছে, এটা কি আপনারা জানেন? নব্বইয়ের দশকে চার্টটা ছিল এমন, ২০০০-এর দশকে এমন, আর গত ৭ বছরে এটা এমন হয়ে গেছে (আকাশচুম্বী)। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা আর আত্মহত্যার হার নিয়ে গবেষণা করে দেখুন। এটা এভাবে বেড়েছে। আর এই সময়টা আর সোশ্যাল মিডিয়ার বিকাশের সময়টা একই। যখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া আরও বেশি ব্যক্তিগত হতে শুরু করেছে, কিশোর-কিশোরীরা আরও বেশি বিষণ্ণ হতে শুরু করেছে।
কেন? এর সম্পর্কটা কী?
কারণ আপনি অন্য কাউকে দেখেন আর আপনার মনে হয়, "ইশ! যদি আমারও ওটা থাকতো!" আপনার মধ্যে আরও বেশি করে তামান্নি তৈরি হয়। আর আপনার যত বেশি তামান্নি হয়, আপনি ভাবেন তামান্নি আপনাকে সুখ দেবে। কিন্তু বাস্তবতা কী? ডেটা আপনাকে কী দেখাচ্ছে? তামান্নি মানুষকে কী দিচ্ছে? এটা তাদের মৃত্যু দিচ্ছে।
আপনি এটা একটা ক্লাসিক্যাল ডিকশনারিতে পড়বেন আর তারপর মনোবিজ্ঞানের গবেষণাপত্রে পরিসংখ্যান দেখবেন আর আপনার মনে হবে, "বাহ! এই আরবরা তো আসলেই জানতো!" আল্লাহ যে এই ভাষাকে একটা কারণে বেছে নিয়েছেন!
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
এর দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থটা তাহলে কী দাঁড়ায়? "মানুষ কি এমন কিছু চায় যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে? মানুষ কি শুধু নিজেকে মিথ্যা বলতে চায়? মানুষ কি শুধু মাতাল, বিভ্রমে থাকতে চায়? আত্ম-বিভ্রমে? এটাই কি সে চায়?"
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
এটা এত শক্তিশালী একটা প্রশ্ন! এটা সেই সব আয়াতের মতো যা আপনাকে জাগিয়ে তোলে। "Wake up!" আয়াত।
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ – এটা সেই আয়াতগুলোর একটা যা আপনার ফ্রিজের উপর লাগিয়ে রাখা উচিত। জানেন তো, এটা আপনাকে যেন একটা চড় মারে। আপনার মা ফ্রিজে যে বিভিন্ন জিনিস লাগিয়ে রেখেছেন, সেগুলো সরিয়ে বরং এটা লাগান।
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কিছু কথা বলেছি, তাই আমি এটা বাদ দিচ্ছি।
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ (সুতরাং, পরকাল ও ইহকাল আল্লাহরই মালিকানাধীন।)
আমাদের পৃথিবীতে "presentism" বা "বর্তমানবাদ" নামে একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে। আর আমি আপনাদেরকে সেটা সম্পর্কে বলতে চাই।
"এই মুহূর্তে বাঁচো।"
"কারো কাছ থেকে কোনো নেতিবাচক কথা শোনার দরকার নেই। ওরা সবাই বিষাক্ত।"
"এইসব নার্সিসিস্টদের কথা শুনো না।" (আর আপনি যে সবাইকে নার্সিসিস্ট বলে রায় দিয়ে দিচ্ছেন, সেটা নিশ্চয়ই আপনার বিনয়ের পরিচায়ক, তাই না?)
"কোনো নেতিবাচক কথা শুনো না।"
"কাউকে তোমার সমালোচনা করতে দিও না।"
"তোমার সুখ খুঁজে নাও।"
"নিজেকে ভালোবাসো।"
"তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো।"
"এই মুহূর্তে থাকো।"
"আজকের জন্য বাঁচো।"
"আগামীকালের চিন্তা করো না।"
"বর্তমানে থাকো।"
এই সবগুলোই হলো সেইসব ইতিবাচক কথা যা লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছে। আর মানুষ আপনার বোকামির সুযোগ নিয়ে টাকা বানাচ্ছে।
"আমি এই মুহূর্তে বাঁচতে চাই।"
"আমি সুখী হতে চাই।"
"এই ভিডিওটাই হবে তোমার সুখের রহস্য।"
আপনি তো "সুখের রহস্য" নিয়ে এত ভিডিও দেখেছেন যে, এতদিনে এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা যে এটা কাজ করছে না। এটা বোঝার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত।
কিন্তু জানেন, এই সবকিছুকে আমি কেন এই আয়াতের নিচে রেখেছি?
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
আসুন, আমি বলি এই আয়াতের অর্থ কী। একমাত্র আল্লাহই শেষ পরিণতির এবং চূড়ান্ত সূচনার মালিক। চূড়ান্ত সূচনা এবং চূড়ান্ত সমাপ্তি—একমাত্র আল্লাহরই মালিকানাধীন।
এই আয়াতটি কেন أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ-এর ঠিক পরেই এলো? সংযোগটা কী?
মানুষ যা চায়, তা হলো—"এই মুহূর্তে"। আপনার আকাঙ্ক্ষা, আপনার চিন্তা, আপনার নেশাগ্রস্ত অবস্থা, আপনার বিভ্রম—সবকিছুই এই মুহূর্তে, "এখন"। আর আপনি… কারণ আপনি… কারণ আমি এতটাই "এখন"-এর নেশায় বুঁদ হয়ে আছি যে আমি সেই শুরুর কথা ভাবি না, যখন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে এই পৃথিবীতে রেখেছিলেন। আর আমি… আমি আখিরাতে কী আসছে, তা নিয়েও ভাবি না। আমি পেছনেও তাকাই না, সামনেও তাকাই না। আমি শুধু কী নিয়ে ভাবছি? "এই মুহূর্তে"।
আর আল্লাহ বলছেন:
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
কুরআন কী করছে? এটা আপনাকে অনেক দূরে সামনে নিয়ে গিয়ে বিচারের দিন দেখায়, আবার আপনাকে অনেক পেছনে নিয়ে গিয়ে পূর্ববর্তী জাতি ও নবীদের দেখায়। আর এটা আপনাকে মানবজাতির সূচনা দেখায়। সবকিছু, আপনাকে একটা দৃষ্টিকোণ বা perspective দেওয়ার জন্য। আপনি কোথায় আছেন, তা বোঝানোর জন্য।
আপনি যদি না জানেন আপনি কোথা থেকে এসেছেন, আর আপনি যদি না জানেন আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তার মানে আপনি হারিয়ে গেছেন। তার মানে আপনার কোনো পরিচয়ের ভিত্তি নেই। আপনি যদি আমাকে বলতে না পারেন আপনি কোথা থেকে এসেছেন, আপনার উৎস কী, তাহলে আপনার স্মৃতিভ্রংশ বা amnesia হয়েছে। আর আপনি যদি বলতে না পারেন আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তাহলে আপনি উন্মাদ।
"কোথায় যাচ্ছো তুমি?"
"জানি না।"
"এখানে কী করছো?"
"জানি না।"
"কোথা থেকে এসেছো?"
"মনে নেই।"
"কিন্তু আমার খুব স্যান্ডউইচ খেতে ইচ্ছে করছে।"
এটা শুনলে মনে হবে আপনি কোনো পাগলাগারদে আছেন। আল্লাহ এখানে এমনই এক চিত্র তুলে ধরছেন। যে মাতাল, সে হয়তো এমনই হয়, তাই না? تمني-এর সাথে তো মাতাল হওয়ারও সম্পর্ক আছে। তাদের কোনো ধারণাই নেই তারা জীবনে কী করছে।
আর এটা একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
"হে তরুণ, তুমি তোমার জীবন নিয়ে কী করতে চাও?"
"আমি জানি না।"
"তুমি কি তোমার বাবার জীবন সম্পর্কে কিছু জানো?"
"আমি জানি না।"
তাকে জিজ্ঞেস করো। আপনি অতীত সম্পর্কে কিছুই জানেন না, ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছুই জানেন না। কোনো পরিচয়ের ভিত্তি নেই।
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
আল্লাহ সেই শুরুর মালিক, যা তুমি ভুলে গেছো। আর তুমি আখিরাতকেও ভুলে যেতে পারো, কিন্তু সেটাও আল্লাহরই অধীনে। মানে, তুমি কোথা থেকে শুরু করেছিলে আর কোথায় শেষ হবে, দুটোই আল্লাহর হাতে। তুমি যত খুশি মাতাল হয়ে থাকতে পারো।
এই বাস্তবতা নিয়ে আমার প্রিয় একটা আয়াত হলো:
إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَىٰ رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ (হে মানুষ, তুমি তোমার রবের দিকে কঠোর চেষ্টায় রত আছো এবং তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে।)
তুমি তোমার রবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো এবং তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে। তুমি মাদক নিতে পারো, মদ খেতে পারো, ব্যভিচার করতে পারো, যা খুশি করতে পারো। তুমি বিশ্বাস করতে পারো বা না পারো, সালাত পড়তে পারো বা না পারো—তুমি তোমার রবের দিকেই যাচ্ছো এবং তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে। এমন কেউ নেই যে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে না। তুমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবেই। فَمُلَاقِيهِ।
তাই তিনি বলছেন:
فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ
যাইহোক, এটা জানা যে আল্লাহ আখিরাতের মালিক, তা একজন বিশ্বাসীকে তামান্নি বা কল্পনা বিলাসের সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। কারণ আপনার এবং আমারও কিছু জিনিস আছে যা আমরা চাই। আমরা এই জীবনে কিছু জিনিস চাই যা আমরা পেতে পারি না। এমন কিছু জিনিস আছে যা আমাদের আটকে রেখেছে। এমন পরিস্থিতি আছে যা আমার ইচ্ছা পূরণে বাধা দেয়। আর আমি একজন বিশ্বাসী, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি, আমি আল্লাহকে ভালোবাসি, আমি আল্লাহর কাছে সালাত পড়ি, কিন্তু আমি তবুও অপূর্ণ। এটা একটা বাস্তবতা।
আর জানেন? যখন আল্লাহ বলেন فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ—যারা الأولى বা সূচনাকে সম্মান করে এবং যারা الآخرة বা পরকালে বিশ্বাস করে, তারা আসলে তাদের তামান্নি বা আকাঙ্ক্ষাগুলো পাবে। তারা আসলেই তা পাবে। তারা যা চেয়েছিল এবং তার চেয়েও বেশি পেতে পারে। আল্লাহ জানেন আপনি কী চেয়েছিলেন, আর শেষে তিনি আপনাকে তা দেবেন যা আপনি চেয়েছিলেন।
আল্লাহ জানেন আপনি কী বঞ্চনার মধ্য দিয়ে গেছেন। তিনি তা জানেন। আপনার এবং একজন অবিশ্বাসীর মধ্যে পার্থক্য হলো, তাদেরও বঞ্চনা আছে এবং তারা ভাবে যে তারা তা পূরণ করতে পারে। কিন্তু তা পূরণ করার পরেও তাদের মধ্যে বঞ্চনা থেকে যায়। আর তারপর তারা নতুন এক বঞ্চনায় ভোগে। কারণ এই জীবনটা আসলে কিছুটা বঞ্চনারই নাম।
মনে আছে, যখন আমরা جَنَّةِ الْمَأْوَىٰ নিয়ে কথা বলছিলাম? ধারণাটা একই ছিল। একমাত্র সেই বাগান যেখানে আপনি এই সব বঞ্চনা থেকে আশ্রয় পাবেন, তা আল্লাহর কাছেই আছে। সেটাই جَنَّةِ الْمَأْوَىٰ। এই পৃথিবীর সব জান্নাত আপনার হৃদয়ে কিছু না কিছু তামান্নি বা অপূর্ণতা রেখেই যাবে। এটা আপনাকে পূর্ণ করবে না। এটা আমাকেও পূর্ণ করবে না।
أَمْ لِلْإِنسَانِ مَا تَمَنَّىٰ فَلِلَّهِ الْآخِرَةُ وَالْأُولَىٰ